অনলাইন ডেস্কঃ চালের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে। সেই দামে চাল বিক্রি করছে না ব্যবসায়ীরা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। মিল মালিকরা বলছে ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে। গত ১৪ বছরে পাঁচ ধরনের চালের দাম নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সব ধরনের চালের দাম ১৪ বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বিশ্লেষণ করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মো. আবু ওসমান জানান, সরকারের বেঁধে দেয়া দামেই আমরা চাল বিক্রি করতে পারছি। তবে মিনিকেটের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। এখন মিল মালিকদের কাছ থেকে ৫৪-৫৬ টাকা দরে আমাদের ক্রয় করতে হচ্ছে। আমরা প্রতিকেজি বিক্রি করছি ৬০-৬২ টাকায়। খুচরা বাজারে স্বর্ণা ৪২ টাকা ও পাইজাম ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিন্নাহ অটো রাইসের মালিক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, এখন সব ধরনের ধানের দাম বেশি। ফলে চালের দামও বেশি। মিনিকেট ধানের দাম সব থেকে বেশি। আমরা প্রতিকেজি মিনিকেট চাল এখন পাইকারি বিক্রি করছি ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে। আবার যারা অটো মিল থেকে এই চাল ক্রয় করছে তাদের বেশি দাম দিতে হচ্ছে। তারা মিনিকেট চাল ৫৪-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। সরকার চালে দাম বেঁধে দিয়েছে, কিন্তু ধানের দাম বেধে না দেয়ায় এমনটা হয়েছে । কুষ্টিয়ার নাহিদ অ্যারোমেটিক অটো রাইস মিলের মালিক আহম্মেদ আলী সরদার স্বপন জানান, ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে। মোটা ধানে প্রতিমণে ১০০ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট ধান বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। ফলে আমাদের বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে সরু চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
চালের বাজারের অস্থিরতা দেখা দিলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মাঝারি ও সরু চালের পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চালকল মালিকদের বৈঠকে এ দর নির্ধারণ হয়। সরকার প্রতিকেজি সরু মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা ও প্রতি ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৫৭৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয়। মাঝারি মানের চাল প্রতিকেজি ৪৫ টাকা ও বস্তা দুই হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গরিব মানুষের জন্য দাম বাড়ানোটা কোনোভাবেই যৌক্তিক না। চালের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ এখন নেই। দিন দিন এসব মানুষ নিজের পরিবার চালাতে হাঁপিয়ে উঠছে। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে তিনটি সরকার ছিল। ২০০৬ সালের শেষ চালের দাম যা ছিল গত ১৪ বছরে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ক্যাবের দেওয়া তালিকায় দেখা যায়, ২০০৬ সালে চালের প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ছিলো ২৭ থেকে ৪০ টাকা। ২০১৬ সালে চালের মান ভেদে ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা। ২০০৬ সালে নাজিরশাইলের দাম ছিল ২৫ টাকা ৫৪ পয়সা। ২০১৬ সালে ওই চালের দাম হয় ৫৫ টাকা ৭৮ পয়সা। ২০০৬ সালে পাইজাম চালের দাম ছিল ২৩ টাকা। গত বছর ওই চালের দাম ছিল ৪০ টাকা ৩৭ পয়সা। ২০০৬ সালে পারিজা স্বর্ণার দাম ছিল ১৯ টাকা ২৫ পয়সা। গত বছর ওই চালের দাম ছিল ৩৭ টাকা ১৯ পয়সা। ২০০৬ সালে বিআর এগারো আটের দাম ছিল ১৮ টাকা ২৫ পয়সা। ২০১৬ ওই চালের দাম ছিল ৩৫ টাকা ৪১ পয়সা। ২০১৭ সালে মিনিকেট চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬৫ টাকা। ২০১৯ সালে নভেম্বর মাসে রাজধানীতে প্রতি কেজি চালের দাম ছিলো ৫২-৭০ টাকা। সূত্রঃ আমাদের অর্থনীতি