জাফর আহমেদ।। ১০ বছর যাবত বিল না দিয়ে গ্যাস ব্যাবহার করছে লাকসাম রেলওয়ের (LCW) লাইনম্যান কাম ওয়্যারম্যান সুফিয়ানুর রহমান। নিজের নামে রেলওয়ের বরাদ্দকৃত কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে অন্য একটি কোয়ার্টার দখল করে সেখানেই সস্ত্রীক থাকতে শুরু করেছেন তিনি। অন্যদিকে নিজের নামে বরাদ্দ হওয়া কোয়ার্টারে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে তা বহাল তবিয়তে ব্যবহার করছেন ১০ বছর ধরে। অভিযোগটি উঠেছে লাকসাম রেলওয়ে কর্মচারী বিদ্যুৎ লাইনম্যান কাম ওয়্যারম্যান সুফিয়ানুর রহমানের বিরুদ্ধে । এছাড়াও বিদ্যুতের সংযোগও তিনি অবৈধভাবে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সুফিয়ানের এসব অবৈধ কর্মকান্ড তুলে ধরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রেলের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) এর নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যার অনুলিপি বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক চট্টগ্রাম, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১/ চট্টগ্রাম, বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তিক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি কোয়ার্টার নেওয়া কর্মচারীদের বেতন থেকে গ্যাসের বিল কেটে রাখা হয়। কিন্তু সুফিয়ানুর রহমানের বেতন থেকে গ্যাস বিল কাটা হয়না। সুফিয়ানের বেতন থেকে গ্যাস বিল না কাটায় প্রশ্ন উঠেছে গ্যাস সংযোগটি বৈধ না অবৈধ? বৈধ হলে তার বেতন থেকে গ্যাস বিল কাটা হয়নি কেন?
অবৈধ হলে ১০বছর ধরে এই গ্যাস সংযোগ চলে কিভাবে? রেলের সরকারি কোয়ার্টারে ডাবল বার্নার চুলার গ্যাসের বিল ধরা হয় মাসে ১০৮০ টাকা। সে হিসেবে ১০ বছরে বিদ্যুৎ লাইনম্যান সুফিয়ান গ্যাস বিল ফাঁকি দিয়েছেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৬শ টাকা।
জানা যায়, ২৮ এপ্রিল ২০১৪ সালে লাকসাম রেলওয়ের কাঠালবাগান কলোনিতে বাসা (ই/৫৮ডি) বরাদ্দ হয় সুফিয়ানের নামে। পরে সেটি ভাড়া দিয়ে অফিসের একটি রুমে ব্যাচেলর হিসেবে থাকতে শুরু করেন সুফিয়ান। সুত্র জানায়, ১৪ সাল থেকে তার নামে বরাদ্দকৃত বাসা বহিরাগত মানুষের কাছে ১ লাখ টাকা জামানত নিয়ে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে রেখেছে। গত ৫/৬ মাস আগে লাকসাম রেলওয়ের সরকারি রেস্ট হাউজের পাশে (টি/৭-সি) বাসা সিলগালা অবস্থায় তালা ভেঙ্গে দখল করে সেখানে সপরিবারে থাকছে এই সুফিয়ান। (টি/৭-সি) বাসাটি সাবেক বেয়ারা আবুল কালামের নামে বরাদ্দ ছিল । আবুল কালাম অবসর গ্রহণ করার পর সুফিয়ান দখল করে নেয়।
সূত্র জানায়, প্রতি মাসে দুটি চুলার জন্য গ্যাস বিল ১০৮০ ও এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকা মাসিক বেতন থেকে কাটা হয়। তবে রেল কর্তৃপক্ষের অগোচরে গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করে প্রতি বছর সরকারকে ফাঁকি দিচ্ছে ১২ হাজার ৯শ ৬০ টাকা। দীর্ঘ ১০ বছর সুফিয়ান দুই চুলা গ্যাস ব্যবহার করে রেলওয়েকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।
এছাড়াও সুফিয়ানের বিরুদ্ধে রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ বাইপাস করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগও। মিটার ব্যবহার না করে বছরের পর বছর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে রেলের এ কর্মচারি। বর্তমানে দখল করা বাসায় কোন বিদ্যুৎ মিটার নেই। মূল সংযোগ থেকে বৈদ্যুতিক তার বাইপাস করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সুফিয়ান। তার এ অনিয়ম ও দখলের বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে অভিযোগপত্র পাঠায় রেলওয়ে কাঠালবাগান কলোনির বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে সুফিয়ানুর রহমান বলেন 20 হাজার টাকা জামানত নিয়ে আবুল কালামের নিকট বাসাটি ভাড়া দিয়েছি। সাড়ে তিন হাজার টাকা মাসে ভাড়া পাই। আবুল কালামের ছেলেরা ইলেকট্রিক ও গ্যাস কন্টাকটারদের সাথে কাজ করে। তারা অবৈধভাবে গ্যাস লাইনটি লাগিয়েছে। অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার সংক্রান্তে সুফিয়ানের কোন দায় নেই বলেও তিনি জানান।