মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও বাজার সংলগ্ন মাধবপাশা এলাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার উদ্ধার করা হুতুম পেঁচা ।
কবিরাজি কাজের জন্য একটা জীবিত পেঁচা বিক্রি করা হবে লোকেশন শ্রীমঙ্গল মুঠোফোন নম্বর ০১৯১৩৫৪৮২৮৩’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হুতুম পেঁচা বিক্রির জন্য এভাবে পোস্ট দেওয়া হয়। আজ সকালে এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পোস্টটি দেখা যাচ্ছিল। ফেসবুকের ওই পোস্ট চোখে পড়ে বনবিভাগের এক কর্মকর্তার।
পেঁচা বিক্রির এই নতুন কৌশলটি চোখে তিনি অবাক হয়ে যান।পরে বনবিভাগের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পাখিটি উদ্ধারের জন্য কৌশলের আশ্রয় নেন। পরে ক্রেতা সেজে পাখিটি উদ্ধার করে বনবিভাগ।
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টার দিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও বাজারসংলগ্ন মাধবপাশা এলাকার হাফিজুর রহমানের বাড়ি থেকে হুতুম পেঁচাটি উদ্ধার করা হয়।
বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাতে মাধবপাশা এলাকার নুর মাস্টারের বাড়িতে একটি হুতুম পেঁচা ধরা পড়ে। ওই বাড়ির বাসিন্দা হাফিজুর রহমান পাখিটি আটক করে বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজতে থাকেন। এ জন্য প্রাণীটির ছবি আপলোড করে ফেসবুকে পোস্টও দেয়। বন বিভাগই ক্রেতা সেজে সেই পাখি কিনতে চায়। ক্রেতা সেজে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর বাড়িতে যান মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র, রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট তাজুল ইসলাম, বনপ্রহরী সুব্রত সরকার প্রমুখ। এ সময় বন বিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে বিক্রেতা হাফিজুর রহমান পালিয়ে যান। পরে তার বাড়ি থেকে হুতুম পেঁচাটি উদ্ধার করা হয়।
মৌলভীবাজার বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ফেসবুকে হুতুম পেঁচা বিক্রির পোস্ট দেখতে পেয়ে খোঁজখবর নিই। পরে আমি নিজেই ক্রেতে সেজে হাফিজুর রহমানকে ফোন করি। হাফিজুর রহমান প্রাণীটির দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা বলেন। আমি ২ হাজার ৫০০ টাকায় নিতে রাজি হই। পরে তাঁর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে আমাদের সহকারী বন সংরক্ষক স্যার ও অন্যরা তাঁর বাড়িতে যাই। হাফিজুরের বাড়ি গেলে সে আমাদের গাড়ি দেখে পালিয়ে যায়। তাঁকে আর সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে থাকা নারীদের কাছ থেকে প্রাণীটি উদ্ধার করি। প্রাণীটিকে সুস্থ্ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা আজ প্রাণীটি পর্যবেক্ষণ করে রাতেই অবমুক্ত করে দেব।’
বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হুতুম পেঁচা বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকারক পোকামাকড়, টিকটিকি, পাখির ছানা, নেংটি ইঁদুর এরা খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে। হুতুম পেঁচা গাছের কোটরে ও দালানের ফাঁকফোকরে বসবাস করে। হুতুম পেঁচাকে দেশের প্রায় সব জায়গায় কম বেশি দেখা যায়। এরা নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে গাছের ফোকরে বা পুরোনো বাসায় তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে প্রায় ৩৫ দিন লাগে। এরা নিশাচর প্রাণী। তাই দিনের বেলায় এদের দেখা যায় না।