হিরোশিমার ৮০ বছর: মানবসভ্যতার সবচেয়ে ভয়াবহ সকাল!

আইন-অপরাধ আন্তর্জাতিক আরো পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

বিশেষ প্রতিবেদন

সেলিম চৌধুরী হীরা:
আজ ৬ আগস্ট ২০২৫। ইতিহাসের ভয়াবহতম একটি সকাল ৮০ বছর আগে ঠিক এই দিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় জাপানের হিরোশিমা নগরী। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটি ছিল প্রথম পারমাণবিক হামলা। বিশ্বজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে “হিরোশিমা ডে”, শান্তির প্রতীক হয়ে ওঠা একটি নির্মম স্মরণদিবস।

এক সেকেন্ডেই মৃত্যুপুরী

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, সকাল ৮টা ১৫ মিনিট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বি-২৯ বোমারু বিমান ‘এনোলা গে’ থেকে ফেলা হয় ‘লিটল বয়’ নামের ইউরেনিয়াম বোমাটি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই হিরোশিমা শহর পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।

প্রাথমিকভাবে প্রায় ৭০,০০০ মানুষ নিহত হন। পরবর্তী কয়েক মাসে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে প্রাণ হারান আরও প্রায় ৭০,০০০ জন। যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তারা বয়ে বেড়িয়েছেন চর্মঝলসানো দেহ, বিকলাঙ্গতা, ক্যান্সার ও মানসিক যন্ত্রণার দগদগে স্মৃতি।

৮০ বছর পরও সেই হাহাকার

প্রতি বছর ৬ আগস্ট জাপানে পালিত হয় হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল ডে। হিরোশিমার পিস পার্কে হাজারো মানুষ প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানান নিহতদের প্রতি।

এই বছর ৮০তম বার্ষিকীতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। আয়োজনে ছিল শান্তির প্রতিজ্ঞা, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে একটি বিশ্বে ‘আর নয় যুদ্ধ, চাই শান্তি’-র আহ্বান।

পারমাণবিক হামলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল, জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতেই এই হামলা। তবে ইতিহাসবিদদের অনেকে বলেন, এই হামলা শুধু যুদ্ধ শেষ করতেই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের অংশও ছিল।

হিরোশিমার ৩ দিন পর, ৯ আগস্ট নাগাসাকিতেও ফেলা হয় আরেকটি বোমা। এরপর জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে ১৫ আগস্ট ১৯৪৫।

বর্তমান বিশ্বে যখন যুদ্ধ, পারমাণবিক উত্তেজনা ও সামরিক আগ্রাসন আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন হিরোশিমার ৮০ বছর আমাদের মনে করিয়ে দেয়— সহিংসতা নয়, দরকার সংলাপ; শত্রুতা নয়, চাই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।

আজকের তরুণ প্রজন্মের উচিত এই ইতিহাস জানা এবং শান্তির পথে সোচ্চার হওয়া। পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা বুঝতে পারাই আমাদের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করার প্রথম শর্ত।
৮০ বছর পেরিয়ে গেলেও হিরোশিমার ধ্বংসস্তূপ আমাদের বিবেককে বারবার নাড়া দেয়।
এই দিনের অঙ্গীকার হোক “কোনো শিশুর মাথার উপর যেন আর কখনো পরমাণু বোমার ছায়া না পড়ে।”


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *