গোলাম রাব্বানী, নওগাঁ
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন বাতি। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আলোর বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। হারিকেন জ্বালিয়ে রাতে হাট-বাজারে যেত গ্রামের লোকজন, দোকানিরা বেচাকেনাও করত হারিকেনের আলোতে।
অমাবস্যার রাতে ঘোর অন্ধকারে হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে পথ চলার স্মৃতি এখনো বহু মানুষ মনে করে। প্রথম হারিকেনের বর্ণনা পাওয়া যায় আল রাযী-র বই ‘কিতাব আল আছা’য় যেখানে তিনি একে ‘নাফতা’ বলে উলেখ করেন। হারিকেন টিনের তৈরি কাচের চিমনি বিশিষ্ট প্রদীপ। আনারসের মতো গোলাকার কাচের চিমনির নিচের অংশে টিনের তৈরি তেলের ট্যাংক থাকত, যার ভেতরে ঢালা হতো কেরোসিন তেল। পেঁচানো রশি দিয়ে বানানো হতো রেশা, এর এক চতুর্থাংশ তেলের ট্যাংকটিতে চুবানো হতো আর বাকি অংশ থাকত কাচের ওপরে।
দিয়াশলাই দিয়ে এই অংশটিতে আগুন জ্বালালেই আলো ছড়াত হারিকেন। হারিকেনের পাশে থাকা রেগুলেটর দিয়ে আলো কমানো-বাড়ানো হতো। ওপরে টিন অথবা স্টিলের তার দিয়ে বহনযোগ্য করে তোলা হতো হারিকেন বাতি। হারিকেনের কেরোসিন তেল রাখার জন্য গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিল বিশেষ ধরনের কাচের ও প্লাস্টিকের বোতল। বোতলের গলায় রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো বাঁশের খুঁটিতে। সন্ধ্যাবেলা হারিকেনের কাচের চিমনি খুলে, ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে কেরোসিন তেল ঢেলে রেশার মধ্যে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালানো হতো।
সারা দেশের প্রায় সবখানে পাওয়া যেত আর বিদেশেও রপ্তানি করা হতো এই হারিকেন। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, শহরেও কমেছে লোডশেডিং। স্বভাবতই কমে গিয়েছে হারিকেনের কদর আর জৌলুস। এখনো গ্রামের দু-একটি বাড়িতে হারিকেন পাওয়া যেতে পারে, সেগুলো হয়তো ময়লা ও মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরে ঘরে, রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে এখন বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানি। প্রযুক্তির উৎকর্ষে হারিকেনের পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ, সোলারপ্লান্ট এবং চার্জারলাইট।
তাপ বিদ্যুৎ, জল বিদ্যুৎ সৌর বিদ্যুত্সহ জ্বালানিখাতে ব্যাপক উন্নয়নে হারিকেন বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেন কী আর হারিকেন নিয়ে মানুষের স্মৃতিকাতরতার তাৎপর্য।