রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল) প্রতিনিধি॥
কাজী মতিউর রহমান। ৭১’র রণাঙ্গনের অমিত সাহসী এক অকুতোভয় বীর যোদ্ধা। দেশ বিজয়ের মাত্র ২০ দিন আগে শত্রুদের নির্মম বুলেটে জীবন প্রদীপ নিভে যায় তার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করে সন্মূখ সমরে অংশ নিয়েছিলেন বরিশালের বানারীপাড়ার চৌয়ারীপাড়া গ্রামের টকবগে যুবক কাজী মতিউর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার ৫২ বছর পর অবশেষে তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন। গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যার ৭ ক্রমিকে গেজেটে ৩৬৩৮ নম্বরে শহীদ কাজী মতিউর রহমানের নাম প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি সেই গেজেটের কপি শহীদ পরিবার হাতে পেয়েছে। এতে খুশি শহীদ পরিবারের সদস্য ও তার সতীর্থ সহযোগী বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে আজও তার লাশ খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় স্মৃতি সংরক্ষণ সম্ভব না হওয়ায় আক্ষেপ সবার। দেশ বিজয়ের মাত্র ২০ দিন আগে শত্রুদের বুলেটে নিভে যায় দেশমাতৃকার সূর্য সন্তান এ বীর সেনানীর জীবন প্রদীপ। ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ছারছিনায় আলবদরদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাতে গেলে শত্রুদের বুলেটে মৃত্যু ঘটে তার। কাজী মতিউর রহমান বানারীপাড়ার চাখার ফজলুল হক কলেজের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাখারে শেরেবাংলার পুত্র একে ফায়জুল হকের নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সেই জনসভায় তৎকালীণ ছাত্রলীগ নেতা কাজী মতিউর রহমানের জ্ঞানগর্ব জ¦ালাময়ী বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু নিজের গায়ের (শরীরের) চাঁদর খুলে তার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সেই মহান নেতার উদাত্ত আহবানে সারা দিয়ে দেশ মাতৃকাকে রক্ষায় একজন দুঃসাহসিক যোদ্ধা ছিলেন কাজী মতিউর রহমান। এ বিষয়ে বরিশালের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন,‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরার পথেই তিনি তৎকালীন মাগুরা বর্তমান ছারছিনায় রাজাকারের গুলিতে শহীদ হন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম শহীদ তালিকায় যুক্ত হয়। এই যে বিলম্ব, এটা বড়ই লজ্জার ও বেদনার। এভাবেই সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত থেকে গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। খুঁজলে হয়তো আরো কয়েক শ’ নাম এভাবে উঠে আসবে। এ ব্যপারে বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠিসহ এ অঞ্চলের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এস এম মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতিক বলেন, ‘কাজী মতিউর রহমান মুক্তিবাহিনী গঠনের আগেই মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ছাত্রনেতা ছিলেন ও বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ ও ¯েœহধন্য ছিলেন। আজ পর্যন্ত তার লাশটি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার তা উদ্ধারের জন্য কোনো চেষ্টাও করেনি, যা সত্যি দুঃখজনক। তার চেয়েও দুঃখজনক তার নামটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গেজেটভুক্ত হতে প্রায় ৫২ বছর সময় লেগে যাওয়া ‘ এই বীরপ্রতীক আরো বলেন, সরকার চাইলে এবং অনুসন্ধান চালালে আজও হয়তো তার কঙ্কাল ছারছিনা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে কাজী মতিউর রহমানের বড় ভাইয়ের ছেলে কাজী মোঃ এনায়েত করিম ইনু বলেন,, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে হলেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিঁনি স্বীকৃতি পাওয়ায় তাদের পরিবার খুশি। তবে আজও তার দেহাবশেষ উদ্ধার ও পাকসেনাদের দোসর ঘাতক রাজাকার আলবদরদের বিচার না হওয়ায় তারা হতাশ ও মর্মাহত। তিনি তার চাচার দেহাবশেষ খুঁজে বের করে নিজ বাড়িতে সমাহিত করার পাশাপাশি সেখানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন,৭১’র রণাঙ্গনের বীর সেনানী কাজী মতিউর রহমানের শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বানারীপাড়াবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের। তার দেহাবশেষ খুঁজে বের করে যথাযথ মর্যাদায় সমাহিত করা ও স্মৃতি রক্ষার্থে পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের তৎপর হতে হবে বলেনও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।