মোহাম্মদ রায়হান বারি, নারায়ণগঞ্জ থেকেঃ আমার ছেলেটা আমার সাথে কাজ করছিল। রাত ৮ টা বাজে সে বাসায় যায়। আমি কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পর জানতে পারি আমার ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। কি দোষ করেছিল আমার ছেলেটা। ছেলেটা লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাকে সহযোগিতা করত। তার মা অসুস্থ থাকার কারণে সে ঘরের কাজও করতো। জানিনা কি কারণে আমার সেই ছেলেটাকে হত্যা করেছে। সে অনেক মেধাবী ছিল।’
রবিবার (২২মে) ফতুল্লা ইসদাইরের স্কুলছাত্র ধ্রুব চন্দ দাস হত্যার বিচার দাবীতে আয়োজিত মানববন্ধনে তার বাবা মাধব চন্দ্র দাস চোখে অশ্রু নিয়ে এসব কথা বলেন। এদিন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে এলাকাবাসী, স্কুলের শিক্ষার্থীরা এবং হিন্দু সংগঠনের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
মাধব চন্দ্র দাস বলেন, আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি। এভাবে যেন অন্য কেউ তার ছেলেকে না হারায়। প্রশাসনের কাছে দাবী এটার যেন সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত করা হয়। ছেলেকে হারিয়ে তার মা আজ শয্যাশায়ী। চারদিন হয়ে গেছে এখনও সে স্বাভাবিক হতে পারছে না। তাকে কে সান্তনা দিবে? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
ছোট বোন মোহনা রানী দাস কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার একটা মাত্র ভাই ছিল। ভাইকে আমি চির জনমের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। ভাই বাহিরে গেলেই আমার জন্য এটা সেটা আনতো। এখন আর কেউ রইলো না এনে দেয়ার। আমি আমার ভাইকে আর ফেরত পাবো না। প্রশাসনের কাছে দাবী থাকবে আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের যেন ফাঁসি নিশ্চিত করা হয়। যেন আর কোনো বোন তার ভাইকে এভাবে না হারাতে হয়।
চাচা মিঠুন চন্দ্র দাস বলেন, আমি আমার ভাতিজা হত্যার বিচার চাই। তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। কি দোষ করেছিল আমার ভাতিজা? আমার ভাতিজা কারও সাথে ঝগড়া করতো না। তাকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
এর আগে গত ১৭ মে রাতে ইসদাইর এলাকায় রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কয়েকজন বন্ধু মিলে ধ্রুব চন্দ্র দাস (১৫) নামে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এই ঘটনায় নিহতের বাবা মাধব চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় আসামী করা হয়েছে, ফতুল্লা থানার ইসদাইর বাজার এলাকার মো. মিঠুর ছেলে ইয়াসিন (১৬), ইসদাইর উকিলের বাড়ীর লিটন দাসের ছেলে পিয়াশ দাস (১৬), বলয় চন্দ্র রায়ের ছেলে রিপন (১৭), উজ্জল চন্দ্র দাসের ছেলে রুদ্র চন্দ্র দাস (১৬), বিমল চন্দ্র শিলের ছেলে অন্তু চন্দ্র শীল (১৬), শ্যামল চন্দ্র দাসের ছেলে জয় চন্দ্র দাস (১৭), প্রান্তোষের ছেলে প্রভাত (১৬), একই এলাকার তুহিন (২১), ফয়সাল (২১) ও হিমেল (১৯)।
তাদের মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রিপন, রুদ্র চন্দ্র ও অন্তর চন্দ্র পৃথক দুটি আদালতে দোষস্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। সেই সাথে গ্রেফতার আরো ৩ জন ইয়াসিন, জয় চন্দ্র ও পিয়াসকে একই দিন ১দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।