সুন্দরগঞ্জে বোরো ধানের ভালো ফলন কিন্তু দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট কৃষক

অর্থনীতি কৃষি সারাদেশ সিলেট
শেয়ার করুন...

মেফতাহুল জান্নাত, সুন্দরগঞ্জ থেকেঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটা- মাড়াইয়ের কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষক-কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। দম ফেলার ফুসরত নেই যেন কারও। ফলনও হয়েছে এবার অনেক ভালো। তবে বাজারে সবকিছুর দামের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। কিন্তু ধানের মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এবারও তাদের প্রতি বিঘা জমিতে গুনতে হচ্ছে লোকসান। সে কারণে বোরো ধানের ভালো ফলনে চোখ জুড়ালেও মুখে হাসি নেই কৃষকের। হাট-বাজারে নতুন ধানের এখন যে দাম, তাতে কৃষকের কোনো লাভ থাকছে না। বরং ৭৫০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতি বিঘায়। আর বর্গাচাষিদের লোকসানের পরিমাণটা আরও কয়েকগুন বেশি।

উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বলরাম গ্রামের আর্দশ কৃষক মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জমিতে এবারে বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তার পরেও প্রতি বিঘা জমিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা করে। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ধান পেয়েছি ২৫ মন করে। প্রতি মন ধানের দাম ৬৫০ টাকা। ২৫ মন ধানের বর্তমান বাজার মুল্য ১৬ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনসহ বাজারজাত করা পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে শুরুতে বীজ ও বীজতলা তৈরি (চারা) বাবদ ১ হাজার টাকা, জমিতে জৈবসার প্রয়োগ বাবদ ১ হাজার ২০০ টাকা, জমি চাষ বাবদ ৮০০ টাকা, চারা রোপনের শুরুতে (টিএসপি ও এমওপি) সার প্রয়োগ বাবদ ১ হাজার ১০০ টাকা, জমিতে চারা রোপনের শ্রমিক বাবদ ১ হাজার ৪০০ টাকা, দুই বার নিড়ানি বাবদ ২ হাজার টাকা, দুই বার কীটনাশক প্রয়োগ বাবদ ১ হাজার টাকা, পানি সেচ বাবদ ২ হাজার টাকা, ধান কর্তন বাবদ ৫ হাজার টাকা, মাড়াই বাবদ ১ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ হাট-বাজারে নিতে পরিবহন বাবদ ৫০০ টাকা।

কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক বিঘায় ২৪/২৫ মণ করে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। বোরো ধানের এ ফলন সন্তোষজনক। তবে দাম কম। বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি। কিন্ত চাহিদা মতো ক্রেতা ও দাম নেই। ফরিয়া মহাজনরা এখনও ধান কিনতে শুরু করেনি। গুদামজাত করার জন্য শুকনো ধান কিনবে মহাজনরা। তার মতে, একমণ ধান কমপক্ষে ৯শ’ থেকে এক হাজার টাকা হলে পুষিয়ে উঠতো পারতেন তারা।’

স্বপ্নের মোড় গ্রামের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সারের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বোরো ধানের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ডিজেলসহ অন্যসব সামগ্রীর দামও বেড়েছে। এমনকি ধান রোপণ করা থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কৃষাণ-মজুরদের মজুরি বেড়েছে অনেক। তিনি জানান, জমির বোরো ধান কাটতে দিন হাজিরায় কোনো শ্রমিকই পাওয়া যাচ্ছে না। চুক্তি ছাড়া কেউ কাজ করছেন না। চুক্তিতে বিঘা প্রতি তারা ৫ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন। দৈনিক তারা ১ হাজার করে টাকা রোজগার করছেন। অথচ ধান চাষ করে যে টাকা খরচ হয়েছে সেটাই উঠছে না। সার-কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ, পারিবারিক ধার দেনা শোধ করা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি।’

ফলগাছা বাজারের ব্যবসায়ী মো. খায়রুজ্জামান মিয়া তারা বলেন, ‘৬৭০/৬৮০ টাকা দরে প্রতি মন ধান কিনছি আমরা ব্যপারীদের কাছ থেকে। তারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আমাদের ধান দিচ্ছেন। আমরা কিনি ৪০ কেজিতে মন। বিক্রি করি ৪১ কেজিতে। প্রতি মনে বাড়তি দিতে হয় ১ কেজি করে। ব্যবসার অবস্থা ভালো না। গতকাল ১৪৪ মন ধানে ২ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। সে কারণে ব্যবসায় তেমন আগ্রহ নেই বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।’

কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল কবির বলেন, ’অনুকুল আবহাওয়ার কারণে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে, বাজারে নতুন ধানের দাম কম। কিন্ত বড় ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় শুরু করলে এই দরপতন কেটে ওঠবে। এছাড়া, সরকারিভাবেও ধান ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.