সাজেক থেকে ফিরে, সেলিম চৌধুরী হীরাঃ
সাজেক ভ্যালি গেলে যে বাড়তি সুবিধা গুলো গ্রহণ করতে পারেন তা নিয়ে আলাকপাত করা হলোঃ-
আগেই বলা হয়েছে যে, সাজেক গেলে অবশ্যই একরাত্রী যাপন করতে হবে। যাদের বাজেট একটু বেশি তারাই বাড়তি সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারবেন।
কিভাবে পাবেন সুবিধাগুলোঃ প্রথমে আপনাকে আরো একরাত একদিন খাগড়াছড়ি থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা যেখান থেকেই যাত্রা শুরু করেন বা যেভাবেই যাত্রা শুরু করেন একরাত একদিন খাগড়াছড়ি অবস্থান করতে হবে। বিশেষ করে ভ্রমণে গেলে রাত্রে যাত্রা শুরু করাই সুবিধাজনক। আপনি রাত্রে যাত্রা শুরু করে সকালে খাগড়াছড়ি গিয়ে পৌঁছবেন। আগে থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। না হয় পৌঁছার পরেও হোটেল নিতে পারেন। জনপ্রতি ৩০০-২৫০০ টাকায় থাকা যাবে। খাগড়াছড়ি বাসস্টেন বা শাপলা চত্বরের আশপাশে রয়েছে হোটেল গুলি।
হোটেল ইকোছড়ি ইনঃ ভালো মানের হোটেল, রুম ভাড়া প্রতি রাত ১৫০০ টাকা ২/৩জন থাকা যাবে। বড় রুমের ভাড়া আনুমানিক হারে বাড়বে। গরম পানি এসিসহ সকল সুবিধা পাবেন। উপরে রুম নিলে খাগড়াছড়ি শহরের মনমুগদ্ধকর পাহাড়ী পরিবেশ দেখা ও উপভোগ করা যাবে। যোগাযোগঃ ০৩৭১৬২৬২৫, মোবাইলঃ ০১৮২৮৮৭৪০১৪.
পর্যটন মোটেলঃ যোগাযোগ ০৩৭১৬২০৮৪, ০১৩৭১৬২০৮৫.
হোটেল শৈল সুবর্ণাঃ সিঙ্গেল ৩০০-৬০০ টাকা, ডাবল ১০০০-১৫০০ টাকায় থাকা যাবে।
হোটেলে গিয়ে প্রেস হয়ে নাস্তা সেরে বের হয়ে যাবেন।
যা দেখবেনঃ প্রথমে শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে রিছং ঝর্ণা, রিছং ঝর্ণা থেকে ফিরার পথে ৫ কিলোমিটার দূরে আলু টিলা, অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার, ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক সবশেষে আধিবাসী মার্কেট ঘুরে দেখা যাবে।
খাগড়াছড়ি ভ্রমণ করবেন কিভাবেঃ প্রথমত নিজেদের ভাড়া করা ভ্রমণ গাড়ীতে ঘুরতে পারেন। ভাড়া গাড়ী না থাকলে সিএনজি, জিপ, মোটর সাইকেল ভাড়া নিতে পারেন অথবা, স্থানীয় লোকাল বাসে চড়ে দর্শণীয় স্থান গুলো ঘুরে দেখতে পারেন। যাতায়াত খরচ তেমন বেশি হবে না, কারণ দর্শণীয় স্থান গুলো ৭ কিলোমিটারের ভিতরে রয়েছে। তবে আলু টিলা ও হর্টি কালচার পার্ক এর প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা।
রিছং ঝর্ণাঃ শহর থেকে ৭ কি.মি, মূল পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভিতরে এই ঝর্ণা। গাড়ী দিয়ে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাকীটুকু উঁচু নিচু পায়ে হাটা পাহাড়ী পথ তবে বেশির ভাগ হাটা পথেই নি¤œমুখি। প্রায় আধা কিলোমিটার আগে থেকেই ঝর্ণার পাশে পাহাড়ের কোলে কোলে ইট-সুরকির ২৩৬টি সিড়ি রয়েছে, দু’পাহাড়ের পাদদেশে যাওয়ার জন্য। তারপর আবার মাটির সিড়ি রয়েছে প্রায় ৫০টি উপরে দিকে যাওয়ার জন্য, এই দু’সিড়ি বেড়ে যাওয়া যাবে ঝর্ণার সং¯পর্শে। ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে যে ক্লান্তি আসবে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এক নিমিশেই। অপূর্ব এই ঝর্ণা দিকে আপনি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবেন। নয়ন আবিরাম ঝর্ণা আপনাকে এনে দিবে প্রশান্তি। আর শুনবেন ঝর্ণা ঝরার শব্দ। দেখতে পাবেন ঝর্ণার নির্মল স্বচ্ছ পানির হৃদ। চারদিকে সবুজের সমাহার। যেখানে প্রকৃতি কথা বলে কবিতার ভাষায়। (আপনার সাথে আলাদা কাপড় থাকলে ঝর্ণার পানিতে ভিজতে পারেন, তবে সাবধান- ঝর্ণার তলদেশ খুবই পিচ্ছিল ও ভয়ংকর)। রিছং ঝর্ণা ভ্রমণে গেলে প্রাকৃতিক অপরূপ সুন্দর্য্য ও ঝর্ণা ধারার তাল আপনার মনকে ফিরে আসতে বাধা দিবে। তারপরেও বেলা ১১টার মধ্যে ফিরতে চেষ্টা করবেন।
আলু টিলাঃ রিছং ঝর্ণা থেকে ফিরার পথে ২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আলু টিলা। আলু টিলা পাহাড় থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়। আলু টিলার প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা আর মশাল ৫ টাকা। চালাক হলে আপনি ২০ টাকায় টিকেট ও মশাল নিতে পারবেন। আলু টিলার মূল আকর্ষণ হলো আর্শচয্য প্রাকৃতিক অন্ধকার সুরুঙ্গগুহা। গেট থেকে আধা কিলোমিটার নি¤œমুখি রাস্তা হেটে বা গাড়ীতে যেতে পারেন।
তারপর ২৬৬ ধাপ সিড়ি রয়েছে আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাবেন গুহার মুখে। ২৮২ ফুট অন্ধকার গুহায় প্রবেশ করতে প্রথমে ভয় পেলেও পরে পুলকিত হবেন। গুহার ভিতর থেকে একটা ঝিরঝির পানির প্রবাহ বয়ে চলছে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক অন্ধকার গুহা এটি। এই গুহায় প্রবেশ করলে আপনি সত্যিকার অর্থে জীবনের থ্রিলিং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। অন্ধকারে ঠান্ডা শিতল, গা শির শির করা ভয়, পায়ে নিচে পাথরে টুকরো। কোথাও কোথায় মাথা নিচু করে পার হওয়া। সবকিছু পিছনে ফেলে আপনি যখন গুহার অপর প্রান্তে পৌঁছবেন, তখন নিজেই আবেগ আপুত হয়ে আশ্চার্য হবে। কি ভয়ংকর থ্রিলিং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আবারো গুহার অপর প্রান্ত দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসবেন। মনে রাখবেন, একবার গুহার ভিতরে ডুকলে, পিছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নাই। কারণ আপনার পিছনে পিছনে অনেক মানুষ ডুকে গেছে। ফিরার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। দুপুর ১টার আগেই আলুটিলা থেকে বেরিয়ে পড়বেন।
মনে রাখবেন, রিছং ঝর্ণা ও আলু টিলার আশেপাশে কোন খাওয়া হোটেল ও টয়লেট নাই। ঘুরা ঘুরির মধ্য যা খাওয়া যাবে তাহল পাহাড়ি ডাব, কলা, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, বড়ই (কুল), চা, বিস্কুটসহ হালকা খাবার। পরবর্তী দশণীয় স্থান হটির্কালচার পার্কে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
হটির্কালচার পার্কঃ আলুটিলা থেকে ৩ কি.মি. দূরে হটির্কালচার পার্ক। হর্টিকালচার পার্ক এর ভিতরে ঢুকার আগেই দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিতে পারেন গেইটের বাহিরে পুডাং থাং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যোগাযোগ- ০১৭৫৬-৮৪৬৬৬৭, মেনু হিসেবে ১২০ থেকে ২৫০ টাকায় জন প্রতি খাওয়া যাবে। এখানকার কাষ্টমারদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা আছে।
কি আছে পার্কের ভিতরেঃ প্রায় ২০০ মিটার ঝুলন্ত ব্রীজ, কিডস জোন, সবুজ বেষ্টনী, পিকনিটক স্পট, কৃত্রিম হৃদ, হলরুম, ওপেন স্টেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ পাহাড়ী শান্ত হৃদ।
প্রায় ২ কি.মি. বেষ্টনীর পাহাড়ের চুড়ায় আধুনিক সাজসজ্জার নির্মিত পার্ক এটি। সেখানে আধিবাসীসহ সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ কারির দেখা পাবেন। ২-৩ঘন্টা সময় কাটাতে পারেন এই পার্কে। সন্ধ্যার আগে বের হয়ে, যেতে পারেন শহরের আবিধাসী মার্কেটে। পছন্দ হলে কেনা কাটাও করতে পারেন সেখানে।
যারা থাকার হোটেলে রাতের খাবার খেতে চান তারা সকালে মেনু সহ অর্ডার করে রাখবেন ।কমন রেষ্টুরেন্টে খেতে চাইলে,খাগড়াছড়ি শাপলা চওর রেষ্টুরেন্ট গুলোতে রাতের খাবার খেয়ে তার পর হোটেলে যেতে পারেন।
সকাল ৭টার মধ্যে নাস্তা সেড়ে ৮টায় স্থানীয় চাঁদের গাড়ীতে চড়বেন। ১০টার আগেই দিঘিনালা পৌছতে হবে। নিজস্ব ভাড়া করা গাড়ী হোটেলের সামনে পাকিং করে রেখে যেতে পারেন। পরদিন হোটেল থেকে গাড়ী নিয়ে যেতে পারবেন।
স্পেশাল বোনাসঃ- যারা সিলেট চা বাগান ঘোরার ইচ্ছা থাকার পরেও যেতে পারেনি, তাদের জন্য চা বাগান ভ্রমণের সুযোগ হতে পারে। সাজেক থেকে ১০টার বহরে ফিরলে ১টায় পৌছে যাবেন খাগড়াছড়ি। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাবেন। গূধুলী লগ্নে আপনি রামগড় যেতে পারবেন। রামগড় উপজেলা ও পৌর শহরের ঢুকার আগেই রাস্তার দু’পাশে দেখতে পাবেন সবুজ গালিচার নেয় ছড়িয়ে আছে চা গাছ। হ্যাঁ সিলেটের বাহিরে যা অল্প কয়েক জায়গায় চা বাগান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম রামগড় চা বাগান। ভারত সীমান্তবর্তি এলাকায় পাহাড়ী সৌন্দর্য্য ঘেরা রামগড়ে রয়েছে ১৭টি চা বাগান। ফেনী-খাগড়াছড়ি সড়কটি রামগড় চা বাগানের সবুজ আভা চিরে চলে গেছে। গাড়ী থেকে নেমে শান্ত সবুজাভায় পুরো বিকেল চা বাগানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে বাড়ী ফিরতে পারেন।