আশরাফুর রহমান রাহাত, জামালপুরঃ জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে হামলার শিকার ভিক্ষুক পরিবারকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নির্যাতন, মামলা ও টেনেহিঁচড়ে হাসপাতাল থেকে হাতে পাঠিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হলেন পুলিশের চারজন উপপরিদর্শক (এসআই)। একইসাথে দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বরখাস্তরা হলেন এসআই আলতাব হোসেন, সাইফুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী ও মুনতাজ আলী। এছাড়া কনস্টেবল মোজাম্মেল হক ও সাথী আক্তারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সুপার নাসির উদ্দীন আহমেদ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন সুমনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার ভিক্ষুক আব্দুল জলিলের (৬৪) বসতভিটার ২০ শতক জমি বেদখল নিতে প্রতিবেশী মুজিবুর রহমান নিয়ে হামলা চালায়। এসময় গুরুতর আহত আব্দুল জলিল (৬৪), তার স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০), বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), মেজো ছেলে ওয়ায়েজ করোনি (২৫), ছোট ছেলে ইমদাদুল হককে (১৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবারের অন্য সদস্য জসিম মিয়াকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভিক্ষুক আব্দুল জলিল মামলা করতে গেলে ওসি মীর রকিবুল হক তাকে থানায় আটকে রাখেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে রাতেই প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমানকে ডেকে চিকিৎসাধীন ৪ জনসহ ১৫ জনকে আসামী করে উল্টো মামলা নেয় পুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভূক্ত ৪ আসামীদের আটক করে। এসময় পুলিশ আহত আসামীদের হাত-মুখ চেপে ধরে মারধর এবং হাসপাতালের শয্যা থেকে চ্যাংদোলা করে নামিয়ে টেনেহিঁচড়ে দ্বিতীয়তলা থেকে নিচতলায় নেয়। পুলিশের এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
এরপর প্রায় ঘণ্টাখানেক তাদের থানাহাজতে রাখার পর বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে। আহতদের আরো কিছুদিন চিকিৎসার প্রয়োজন ছিলো। চিকিৎসাধীন আসামীদের যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।
সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আব্দুল জলিলসহ অন্যদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে৷ না হলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো।
এ ব্যাপারে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, এমন অমানবিক ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। যে সকল পুলিশ সদস্য এটা করেছে তাদের মধ্যে চারজন এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দুইজন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।