সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল: হাইকোর্ট

আইন-অপরাধ আরো জাতীয় ঢাকা
শেয়ার করুন...

ডেস্ক নিউজঃ
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধানসংক্রান্ত সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

২০১৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একই বছরের ১ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়। এ অবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধাসংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারাটি সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারাটি কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এ রুলের ওপর গতকাল বুধবার শুনানি শেষ আজ রায় দেয়া হলো।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
রায়ের পরে মনজিল মোরসেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ৪১ (১) ধারাটি সংবিধানপরিপন্থী বলে বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে, ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে পূর্বানুমতি লাগবে না।
সরকারি চাকরি আইনে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি-সংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারার ভাষ্য, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
শুনানিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, সংবিধান অনুসারে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। অথচ সরকারি চাকরি আইনের ধারাটি বৈষম্যমূলক।
সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে যেকোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিলযোগ্য।
সরকারি চাকরি আইন ৪১ (১) ধারার মতো একই ধরনের বিশেষ সুবিধা দিয়ে আনা বৈষম্যমূলক বিধান রেখে ২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২ (ক) ধারা প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ নিয়ে রিট হলে আইনটি বৈষম্যমূলক ঘোষণা করে হাইকোর্ট বাতিল করেছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়নি বলে শুনানিতে বলেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান কি বৈষম্যমূলক নয়? সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হয়? অভিযোগ পেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রত্যুত্তরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এটি বৈষম্যমূলক নয়। কেননা, সরকারি কর্মচারীরা নিজেরাই একটি শ্রেণি। এই শ্রেণির মধ্যে কোনো বৈষম্য হচ্ছে না।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.