মোঃ ছানোয়ার হোসেন, শাজাহানপুর থেকেঃ
উপজেলা জুড়ে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার ব্যস্ততা। দ্রুত মাঠের ধান ঘরে তুলতে না পারায় দুঃচিন্তা আর সংশয়ে কাটছে কৃষকের দিন। তার উপর কয়েক দফা ঝড় আর বৃষ্টিতে মাঠের বেশিরভাগ ধান গাছ এখন পানির নিচে। তাই ফলনও পাচ্ছেন না আশানুরূপ। শ্রমিকের মজুরিও গুনতে হচ্ছে গত বছরের প্রায় দ্বিগুন। এক মণ ধানের দামেও মিলছে না একজন শ্রমিক।
উপজেলা জুড়ে শ্রমিক সঙ্কট এবং বৃষ্টির কারণে ধান চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছেন।
শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্ৰামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, ধান কাটার পর বৃষ্টির কারণে শ্রমিকরা চলে গেছেন। ধান বহন করার জন্য ৫ দিন শ্রমিক খোঁজার পর অধিক মজুরিতে পেয়েছি। তবে বৃষ্টিতে ভিজে ধানের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।
আড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক ও ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তার চারবিঘা জমির ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে পঁচেগেছে। ফলে তিনি আর ধান ঘরে তুলতে পারেন নাই। জমিতেই ঝড়ে পড়েগেছে সব ধান।
তিনি আরো জানান, চারবিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হবে আটাশ হাজার টাকা, আর ধান বিক্রি করে পেতাম পঁচিশ হাজার টাকা। তাই ধান না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
চোপীনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল সাত্তার বলেন, ধান কাটার কাজের জন্য অনেক খুঁজে ১হাজার টাকা দিয়ে শ্রমিক পেয়েছি। ধান আবাদে এ বছর খরচ অনেক বেশি। মাদলা এলাকার কৃষক রবি সাহা বলেন, হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আবাদে খরচ অনেক বেশি, সে তুলনায় ফলন কম। এ বছর অনেক লোকসান হবে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান যখন ফুলে বের হয়েছে, তখনই কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ নুয়ে মাটিতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের খরচের টাকাও উঠবে না। তাছাড়া শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় শ্রমিকরা ধান কেটে দিতে চাচ্ছে না। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
তবে কালবৈশাখি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম মোটামুটি ভালো, তবে সময়মতো মাঠ থেকে ধান তুলতে পারব কি না সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তা। কারণ গেল কয়েকদিন আগে ধানের গাছ থেকে শিষ বের হওয়ার পর হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে ধান মাটিতে পড়ে গেছে।
শ্রমিক সংকটের কথা উল্লেখ করে একজন কৃষক বলেন, মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ এলাকায় ৮-৯শ টাকা মণ ধান। শ্রমিকের মজুরি বাবদ অনেক বেশি খরচ পড়ছে। হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
মজুরি বেশি নেওয়ার বিষয়ে শ্রমিকরা বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে তো মজুরি বেশি নিতেই হবে। যে টাকা পাই তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনতেই শেষ। চালের দাম বেশি। তেল, মাছ, মাংসের দামও বেশি।