শেখ হাসিনার বিচার দাবি: ৯ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা

আইন-অপরাধ আরো চট্টগ্রাম জাতীয় ঢাকা
শেয়ার করুন...

শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের লোকজনের বিচারের দাবিতে বেলা ১২ টায় শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের অনশন শেষ হয় রাত ৯টায়। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) তাদের বিচারে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখায় এই অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।

সকাল সাড়ে ১১টা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে হঠাৎ জড়ো হলেন ২০–২৫ জন তরুণ শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ। এরপরই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার বিচার দাবিতে স্লোগান শুরু করেন তারা।

সেখানে বক্তব্য দেন রাসেল আহমেদ। বক্তব্যের একপর্যায়ে হঠাৎ রাসেল বলেন, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের লোকজনের বিচারে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ তারা দেখেননি। হামলা ও হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ সবার বিচার করতে হবে। বিচারের দাবিতে তিনি আমরণ অনশনে বসছেন। এর পরই অনশন শুরু করেন অন্যরাও।

প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাতের ওপরেই বসে যান রাসেল ও তাঁর সঙ্গে থাকা অন্তত ২০ শিক্ষার্থী। শুরু হয় স্লোগান ও বিপ্লবী গান। এর একপর্যায়ে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে উঠে চেরাগী পাহাড়-জামালখান সড়কের এক পাশে বসে যান তাঁরা। একে একে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বন্ধ হয়ে যায় সড়কের এক পাশে অন্তত ১৫০ মিটার এলাকা।সেখানে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আশরিফা আহমেদ, নীলা আফরোজ, জুবাইরুল আলমসহ অনেকে। তাঁরা বলেন, ‘ইউনূস সরকারকে বসানো হয়েছিল বিচার করার জন্য, সংস্কার করার জন্য; কিন্তু আমরা কোনো দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ দেখিনি। সেনানিবাস থেকে ৬২৬ জন কীভাবে পালিয়ে গেলেন, তা স্পষ্ট করতে হবে।’

এরপর আবারও বিপ্লবী গান ও কবিতা পাঠ শুরু করেন তারা। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। বিকেলের দিকে আবার বক্তব্য দেন রাসেল আহমেদ। এদিন সকালে নগরে মিছিল করেছিল নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ। বক্তব্যে এবার সে বিষয় টেনে এসে রাসেল বলেন, ‘মিছিল করা ছাত্রলীগের গুন্ডাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। না হয় আমরা নিজেরাই তাদের বিচার করব।’

সন্ধ্যার ছয়টার পর সড়কে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী শুয়ে পড়েন। এরপর অনশনের স্থলে আসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। রাসেলসহ অন্যদের আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এর পরও তারা আশ্বস্ত না হলে জেলা প্রশাসকের মুঠোফোন থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের সঙ্গে কথা বলেন রাসেল। উপদেষ্টার আশ্বাসেও অনশন ভাঙেননি তারা।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে সেখানে আসেন প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। এবার মুঠোফোনে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দীর্ঘক্ষণ কথা বলে তিনিও চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার। তবে নিজেদের সিদ্ধান্তের অটল রইলেন শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসক আরেক দফা আশ্বস্ত করলেন তাদের।

ঘড়িতে রাত নয়টার কাছাকাছি। এবার জুস হাতে আরেক দফা শিক্ষার্থীদের দিকে এগিয়ে যান জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। তাদের আশ্বস্ত করার পর এবার অনশন ভাঙলেন রাসেলসহ অন্যান্য অনশনকারীরা। তবে এ সময় তাদের দাবি আদায়ে তিন দিনের সময় বেঁধে দিলেন রাসেল আহমেদ। প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ধরে সড়কেই বসে ছিলেন তাঁরা।জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ধরে সড়কেই বসে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন, আমরা সেটি মেনে নিয়েছি।’


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.