এম,এ মান্নান, লাকসাম (কুমিল্লা)প্রতিনিধি
যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা বই আর খেলার মাঠে।সে সময়ে তারা তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ঘরকুনো হয়ে গেইমের নেশায় বুদ হয়ে রয়েছে।১০-২৫ বছরে এসব শিশু, কিশোর ও তরুণরা প্রতিনিয়ত স্মার্টফোনে গেইমে আসক্ত হচ্ছে। গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দেশে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে বাস্তবতা পাল্টে গেছে। এদিকে অনলাইনে পাঠদানের নামেও শিক্ষার্থীদের হাতে লাকসাম-মনোহরগুঞ্জ উপজেলার অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা হাতে স্মার্টফোন পেয়ে অনলাইনে পাঠের বদলে বিভিন্ন ধরনের খেলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে।
নানা বাহানা ধরে অভিভাবকদের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিয়ে পাড়াগাঁয়ের শিশু–কিশোর, তরুণেরাও স্মার্টফোনে গেমস নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যস্ত থাকছেন। আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমুতে সময় ব্যয় করছে। নানা চেষ্টা করেও অভিভাবকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। সম্প্রতি লাকসাম-মনোহরগুঞ্জ উপজেলা অঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেল। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার আলী নোয়াব স্কুল এন্ড কলেজ, রাজাপুর, খিলা উচ্চ বিদ্যালয়, মনোহরগুন্জ কলেজ, নবাব ফয়েজুন নেচ্ছা সরকারি কলেজ মাঠে একদল কিশোর–তরুণকে দেখা গেল। তাঁদের হাতে ১৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা দামের স্মার্টফোন। তাঁরা সবাই ‘ফ্রি ফায়ার’ নামের একটি মোবাইল গেমস খেলায় ব্যস্ত। ‘ফ্রি ফায়ার’গেইমে আসক্ত এক কলেজ ছাত্র জানান,প্রথমে পাবজি গেইম ভালো লাগত না। কিছু দিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন আসক্ত হয়েছি।এখন না খেললে ভালো লাগে না।
মুদাফরগুনঞ্জ দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জনান,আগে এসব গেমস সম্পর্কে জানতাম না। এখন নিয়মিত খেলি। মাঝে মধ্যে খেলতে না পারলে মুঠোফোন ভেঙে ফেলার উপক্রম হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষাক্ষীর মা বলেন, তাঁর ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে সে এখন পাঠ্যবই পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। ঘোষণা দিয়েছে, বিদ্যালয় খুললেও সে আর বিদ্যালয়ে যাবে না। তার নাকি সনদের প্রয়োজন নেই।
লাকসাম উপজেলা শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ স্কাউটস উপজেলা শাখার সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা চরম বিপাকে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের উপর লেখাপড়ার চাপ নেই,পরীক্ষা নেই তাই তাহারা বাসায় সারাক্ষণ মোবাইল ও টেলিভিশন উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। জিম্মি থাকায় শিক্ষার্থীরা খিটখিটে ও বদমেজাজি হয়ে অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ হীন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ অভিভাবকই তাদের চরম হতাশার কথা আমাদেরকে বলেন।কাজেই, এই অবস্হায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ের শ্রেনি কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়া আর কোন উপায় আছে বলে আমি মনে করিনা।
সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ছেলের বয়স ১৩ বছর কিন্তু রাত ১২-১টা হলেও তার হাত থেকে মোবাইল নিতে পারি না। এটা মাদকের মতো নেশায় পরিণত হয়েছে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার লাকসাম সার্কেল মোঃ মহিতুল ইসলাম বলেন,
মহামারীতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বাচ্চারা এখন বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ভিত্তিক গেমস, ফেসবুক, অনলাইনে পর্ন, অনলাইন জুয়া সহ বিভিন্ন ব্যাপারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার প্রভাবে সমাজে আমরা লক্ষ্য করছি করোনা কালীন সময়ে ধর্ষণসহ নারী ও শিশুর প্রতি অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।এ জন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার দরকার।