কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার লাকসামে দক্ষিণ (দোখাইয়া) চাঁদপুরী দরবার শরীফে ওরশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
এদিকে ওরশ বন্ধের দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকালে সচেতন নাগরিক সমাজ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে ও লাকসাম থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করেছে।
সমাবেশ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে সচেতন নাগরিক সমাজের নেতারা বলেন- প্রশাসন ওই ওরশ বন্ধে ব্যর্থ হলে ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথ, ঢাকা নোয়াখালী সড়ক অবরোধসহ লাকসামে হরতাল কর্মসূচী পালন করা হবে।
জানা গেছে, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ওই দরবার শরীফে ওরশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতি বছর ২২ মাঘ এখানে মাইজভান্ডার শরীফের সিলসিলা মতে হাজার হাজার ভক্ত অনুসারী নিয়ে বিশাল ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এবারের ওরশ অনুষ্ঠান নিয়ে ওই দরবার শরীফের দুই পীরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ ও এলাকাবাসী। এ নিয়ে তৌহিদী জনতার ব্যানারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও পোষ্টারিং করা হয় ওই ভন্ডপীরের বিরুদ্ধে। তবে ওই দরবার শরীফের আরেক পীর মঞ্জুর আলম পারভেজ ওরশ আয়োজনের ঘোষণা দেয়ায় এলাকার সাধারণ মুসুল্লি ও পীরের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী জানায়, দেশ বরেণ্য মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। ওই দুই পীরসহ চাঁদপুরী দরবার শরীফের অপর পীর সৈয়দ মঞ্জুর আলম পারভেজ এবং তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম বাইপাসে মানববন্ধন এবং দৌলতগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়াও ওই তিন পীরকে লাকসামে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে পোষ্টারিংও করা হয়। এরই মধ্যে মঞ্জুর আলম পারভেজ ওরশ আয়োজনের ঘোষণা দেয়ায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও গত ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ও ৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সড়কে মানববন্ধন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে ওরশ বন্ধের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সমাবেশ করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। এতে বক্তব্য রাখেন- নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, যুগ্ন আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবুবকর জাহিদ, সদস্য সচিব ফখরুল ইসলাম মাসুম, আশিরপাড় বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাওলানা নজরুল ইসলাম।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, মাওলানা মহিউদ্দিন, মাওলানা খলিলুর রহমান, হাফেজ শাহ আলম মজুমদার, এটিএম শওকত হোসেন বিপ্লব, ছাত্র প্রতিনিধি আরাফাত সানি ইউসুফ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন- বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়েরকারী ধর্ম ব্যবসায়ী, দেশ জাতি, মানবতা ও ইসলামের দুশমন, ভন্ডপীর রেজাউল হক চাঁদপুরীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। ওরশের নামে ভন্ডামি বন্ধে এ ওরশ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথ অবরোধসহ লাকসামে হরতাল কর্মসূচী পালন করবে সচেতন নাগরিক সমাজসহ এলাকার জন সাধারণ।
এদিকে, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা ওরশের আয়োজক সৈয়দ মঞ্জুর আলম পারভেজকে থানায় ডেকে নিয়ে ওরশ আয়োজন না করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি ওরশ আয়োজনে অনড় থাকেন।
লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা জানান, দু’পক্ষের উত্তেজনার বিষয়টি নজরে আসলে মঞ্জুর আলম পারভেজ পীর সাহেবকে ওরশ আয়োজন না করার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ওরশ আয়োজনে অনড় থাকেন। তাই কুমিল্লা পুলিশ সুপারের অনুমতি নেয়ার জন্য উনাকে বলেছি। তিনি জেলা পুলিশ সুপার থেকেও অনুমতি পাননি। তবে তারা জানিয়েছেন- সুন্নতে খৎনা আর কয়েকজনকে তাবারক দিবেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে সেনাবাহিনী অবস্থান করছেন এবং আমাদের পুলিশ অফিসারও সেখানে রয়েছেন। ওরশকে ঘিরে তাদের সকল কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠানের কোন অনুমতি পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পীর সৈয়দ মঞ্জুর আলম পারভেজ বলেন, আমি কোন পীর নয়। আমি দরবার শরীফের একজন নগন্য কেয়ারটেকার হিসেবে দরবারের কিছু খেদমত করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউছার হামিদ বলেন- লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ (দোখাইয়া) সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দরবার শরীফে ওরশ অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনিক ভাবে কোন প্রকার অনুমতি দেয়া হয়নি।