সেলিম চৌধুরী হীরাঃ
লাকসামে দীর্ঘদিন ধরে অফিসে অনুপস্থিত উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার (আইসিটি) কর্মকর্তা কাজী আরফিনা ওয়াহিদ। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সেবা গ্রহীতাসহ উপজেলায় উপস্থিত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর।
একাধিক সুত্র জানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের লাকসাম উপজেলা কার্যালয়ে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে ২ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে কাজী আরফিনা ওয়াহিদ যোগদান করে ১৮ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত কাগজপত্রে কর্মরত থাকলেও বাস্তবে তিনি অফিস করতেন না বলে সুত্র গুলোর দাবি।
সুত্র মতে যোগদানের পর থেকেই তিনি তৎকালীন সময়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে (মেনেজ সিস্টেম) অনিয়মিত ছিলেন অফিসে৷
উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত দপ্তরে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে ১৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে অতিরিক্ত দায়িত্বে যোগদান করেন ফারুক আজম। তিনি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত কর্মরত থাকলেও অফিসে ছিলেন অনিয়মিত।
২৪ মার্চ ২০২১ তারিখে আরেকজন অতিরিক্ত দায়িত্বে যোগদান করেন মোঃ হাছান ইমাম। তিনিও ছিলেন অনিয়মিত। তবে কত তারিখ পর্যন্ত তিনি কর্মরত ছিলেন এটা কেউ বলতে পারছেনা।
দ্বিতীয় মেয়াদে ২৪ সালের ১০ জুলাই আবার যোগদান করেন কাজী আরফিনা ওয়াহিদ। যোগদানের পর থেকেই তিনি পূর্বের ন্যায় নিয়মিত অফিস করছেন না! এর মধ্যে ২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতন হওয়ার পর থেকে তিনি দীর্ঘ সময় অফিসে আসেননি।
দীর্ঘদিন তার অনুপস্থিতির খুঁজ নিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার তার অফিসে গেলে দেখা যায় ওই অফিসে তালা ঝুলছে।
এবিষয়ে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাউছার হামিদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের লাকসাম উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার কাজী আরফিনা ওয়াহিদ বিভিন্ন কারণে নিয়মিত অফিসে আসেন না তা সত্য৷ কি কারনে অনুপস্থিত জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোন কারণ জানাতে পারেননি।
এদিকে তার স্বামী মোঃ শহীদ শিকদার ঢাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত আছেন। কেউ কেউ বলছেন স্বামী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকুরী করেন, এ কারণে একটু ক্ষমতা খাটাতে চান কাজী আরফিনা ওয়াহিদ!
সহকারী প্রোগ্রামার কাজী আরফিনা ওয়াহিদের নিয়োগ ২০১৫ সালে। তখন ২ জন প্রোগ্রামার ও ১৯৮ জন সহকারী প্রোগ্রামার নিয়োগ দিয়েছিল আওয়ামীলীগ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর।
সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানাযা, তৎকালীন সময়ে সারাদেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে অনিয়মিত অফিস করতেন এসব কর্মকর্তারা। অফিস না করেই সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা বেতন ভাতা নিচ্ছেন তারা।
এদিকে মাঠ পর্যায়ে আইসিটি কর্মকর্তা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা প্রদান করার জন্যই তাদের নিয়োগ। তারা বিভিন্ন সরকারি সেবা ডিজিটালাইজেশনে কাজ করবেন।
মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে আইসিটি অফিসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। বিভিন্ন জরিপ ও ডাটাবেজ তৈরি এবং তার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণে সহায়তা করবেন। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের লাকসাম উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার কাজী আরফিনা ওয়াহিদ দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত থাকার ফলে এসব কাজে সহযোগিতা পাচ্ছেন না সরকারি-বেসরকারি দপ্তর গুলো।
ফলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনলাইন ভিত্তিক কাজ স্থবির হয়ে আছে। দুর্ভোগে পড়ছেন সেবা গ্রহীতারা।
আপডেট করা যাচ্ছে না বিভিন্ন দপ্তরের অনেক কাজ। তাই এমন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষ জরুরী সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার বলে মনে করেন সেবাগ্ৰহিতারা।
নিয়মিত অফিস করার মতো ভালো ও দক্ষ একজন কর্মকর্তাকে লাকসামে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী সহ সেবা গ্রহীতা।
এবিষয়ে সহকারী প্রোগ্রামার কাজী আরফিনা ওয়াহিদের সাথে যোগাযোগ করে লাকসামে তার দ্বিতীয় যোগদানের গত ৮ মাসে কতদিন অফিস করেছেন জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। অনেকটাই এড়িয়ে যান৷
লাকসামে তথ্যপ্রযুক্তিগত কি কি সেবা দিয়েছেন জানতে চাইলে তাও বলতে পারেননি। হাজিরা কোথায় দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ফার্স্ট ক্লাস অফিসার আমার হাজিরা লাগে না। অফিস পরিদর্শন রেজিস্টার দেখতে চাইলে উক্ত রেজিস্টার নেই বলে জানান।
কুমিল্লা জেলা প্রোগ্রামার মোহাম্মদ বশির উদ্দিন বলেন আগে থেকে আমি জেনেছি তিনি নিয়মিত অফিস করেন না৷ তার এ অনিময়ের ব্যাপারে তাকে সতর্ক করা হয়েছে৷ বিষয়টা আমি ডিজি স্যার কে জানাবো৷
