লাকসামের ৫শ’ বাবুর্চির মানবেতর জীবন যাপন :দূর্বারবিডি

পরিবেশ বিশেষ রচনা বলি
শেয়ার করুন...

সুস্বাদু খাবারের নিপুন কারিগর বাবুর্চিদের পরিবারেই এখন খাবারের জন্য হাহাকার। তাদের ঘরে খাবার নিয়ে টানাটানি। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক ও ঘরোয়া আয়োজন বন্ধ থাকায় গত ৪/৫ মাস ধরে বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। লাকসামের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেটরের সঙ্গে জড়িত ৫ শতাধিক বাবুর্চির অনেকেই এখন ভিন্নকিছু করে কোনোমতে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। এতদিন যারা সুস্বাদু খাবার রান্না করতো কাজ হারিয়ে আজ তাদের ঘরই খাবারশূণ্য। ধুলোজমা পাতিলের সঙ্গে যাদের জীবন জড়িয়ে; করোনা মহামারিতে রান্নার সেই কারিগরদের ললাটেও জমেছে অনিশ্চিয়তার কালো মেঘ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান-পাট, অফিস খুললেও বন্ধ রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার, ডেকোরেটর দোকান। ঘরোয়া বা সামাজিক অনুষ্ঠানাদির আয়োজন নেই। বিগত ৪/৫ মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবুর্চিরা।

লাকসাম পৌরশহরের রাজঘাট এলাকার ফজল বাবুর্চি। বয়স পঞ্চাশের কোটায়। অনুষ্ঠানাদির রান্না-বান্নাই তার একমাত্র কাজ। গড়ে প্রতি মাসে ৬০/৭০ হাজার টাকা আয় করতেন। ছেলে-সন্তান নিয়ে ভালো কাটছিল তার সংসার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় সকল সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান। এমনকি ঘরোয়া ছোট-খাট আয়োজনও বন্ধ হয়ে যায়। এতে একেবারেই বেকার হয়ে পড়েন তিনি। গত ৪/৫ মাস বেকার থাকতে থাকতে ধার-দেনায় পর্যদস্তু হয়ে পড়েছেন।

ফজল বাবুর্চি জানান, প্রায় ২০-২৫ জন পুরুষ এবং ৭/৮ জন মহিলা সহকারি তার অধীনে কাজ করতেন। গড়ে প্রতিমাসে ছোট-বড় ২০/২২টি অনুষ্ঠানের কাজ পেতেন। অনুষ্ঠানাদি বন্ধ হয়ে যাওয়া সহকারির কাজ করা ৩০/৩২ জন লোক বেকার হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, তাদের অনেকেই মওসুমি ফল আম-কাঁঠাল বিক্রি করে, কেউবা রিকশা চালিয়ে, আবার কেউ তরকারি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন, সহকারীরা যা পাচ্ছে তাই করে কোনরকম সংসার চালাচ্ছে। কিন্তু লোকলজ্জায় এসব কাজও করতে পারছিনা। তিনি বলেন, একসময়ে হাজার হাজার মানুষকে রান্না করে খাইয়েছি কিন্তু এখন রান্নার কারীগরদের ঘরেই খাবার নিয়ে টানাটানি। এদিকে, বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া শরীর নিয়েই জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন স্বপন বাবুর্চি। সংসারের ভার টানতে টানতে ক্লান্ত শরীরে বাসা বেধেছে নানা অসুখ। তারপরও একমুহূর্ত থামার উপায় নেই। করোনা মহামারি যেন পুড়ে যাওয়া কয়লার মতো তার জীবন-জীবিকাকেও অঙ্গার করে তুলেছে। তিনি বলেন, আমরা রাইন্ধা-বাইড়া খাওয়াই। আর এখন আমরাই না খাইয়া কষ্ট করতেসি। তার মাঝে ১০ পয়সারও ইনকাম নাই। এভাবে চললে ভিক্ষা ছাড়া আমাদের উপায় নাই।

ইউএস কামাল ডেকোরেটরের ম্যানেজার শাহেদ বলেন, মিলাদ-মাহফিল, বিয়ে-শাদি যা কিছু সবই পুরো বন্ধ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধরে রাখা বড়ই কষ্ট হচ্ছে। আমাদের সাথে জড়িত কর্মীরাও বেকার হয়ে পড়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে প্রায় ১০ বছর ধরে রান্না-বান্নার কাজ করছিলেন জামাল বাবুর্চি। তবে, জীবনের তাগিদে শেষমেশ রিকশার প্যাডেলই এখন তার সঙ্গী। তিনি বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় রোডে নামতে হয়েছে। বাবুর্চিদের কোনো সংগঠন না থাকলেও তারা বলছেন, লাকসাম উপজেলায় প্রায় ৫শ’ রান্নার কারিগরের পরিবারে চলছে হাহাকার। বাবুর্চি ও তাদের সহকারিরা বেকার হয়ে পড়ায় অনেকে আলু-পেঁয়াজ বিক্রিসহ নানা কাজ করে সংসারের হাল টানছেন।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *