রাজবাড়ী সংবাদদাতাঃ রাজবাড়ীতে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। যাবতীয় খরচ মিটিয়ে আয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। খাদ্যের দাম না কমলে বড় ধরণের লোকসানের মুখ দেখতে হবে তাদের।
আসন্ন কোরবানির ঈদ’কে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলায় বিপুল সংখ্যক গরু ছাগল ও মহিষ মোটা তাজা করছেন খামারিরা। কিন্তু দিনকে দিন গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় খামারিদের খরচ বাড়ছে।
জেলার বিভিন্ন খামারিদের কাছ থেকে জানা যায়- এখন ভাল মানের ১বস্তা গমের ভূষি বিক্রি হচ্ছে ১৮শ টাকা থেকে ২হাজার টাকা পর্যন্ত। যা আগে বিক্রি হতো সাড়ে ১২শ টাকায়, ১বস্তা ভুট্টার গুড়া বিক্রি হচ্ছে ১৬শ টাকা থেকে ১৮শ টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ৮শ থেকে ৯শ টাকায়। ১বস্তা চালের কুড়া বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭শ টাকা থেকে ৮শ টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ৫শ টাকায়। ১বস্তা খৈল বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪হাজার টাকা থেকে ৫হাজার টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ৩হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। ৩০কেজির ১বস্তা খেসারির ভূষি বিক্রি হচ্ছে ১৬শ টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ১হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকায়। ১মুঠো ঘাস বিক্রি হচ্ছে ২০থেকে ৩০টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ১০থেকে ১৫টাকায়। মাসকালাইয়ের ডালের ভুষি বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকা থেকে ১৪শ টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ৮শ টাকা থেকে ১হাজার টাকায় এবং ১আঁটি ধানের খড় বিক্রি হচ্ছে ৫থেকে ৬টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ৩টাকায়। এছাড়া গরুর ভ্যাকসিনসহ সকল ঔষুদের দাম বেড়েছে। ফলে হঠাৎ করেই উৎপাদন খরচ দ্বিগুন হয়েছে। একই সাথে বাজারে চাহিদামত খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে উৎপাদিত দুধের দাম লিটার প্রতি সেই ৫০টাকাই রয়েছে। একারনেই খামারিদের লোকসানের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুতই গো-খাদ্যের দাম না কমলে খামারিদের খামার রাখা সম্ভব হবেনা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১২হাজার গরুর খামার রয়েছে।
রাজবাড়ী শহরের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল হালিম বাবু বলেন, বছর দশেক আগে ছাত্র জীবন থেকে লেখা পড়ার পাশাপাশি গাভী পালন শুরু করি।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে চাকরির চেষ্টা বাদ দিয়ে খামারটিতে মনোনিবেশ করি। বর্তমানে এ খামারে ১৯টি গরু আছে। কিন্তু বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ১৫দিন আগেও যেখানে প্রতিদিন খামারের খরচ ছিল ৩হাজার টাকা সেখানে আজ সেই খরচ বেড়ে দাড়িয়েছে ৬হাজার টাকায়। আবার বাজারে টাকা দিয়েও চাহিদামত গো-খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে আয় হয় ৩হাজার টাকা। যার ফলে প্রতিনিয়তই অতিরিক্ত খরচ গুনছি। এ অবস্থায় কোনভাবেই এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য চাকরি বা ব্যবসার চিন্তা করছি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুরে অবস্থিত এপি এগ্রো ডেইরি খামারের মালিক আবুল কালাম আজাদ কোহিনুর বলেন, আমার খামারে চার শতাধিক গরু ছিল। ক্রমাগত লোকসানের কারনে বিক্রি করতে করতে এখন ৮০টি গরু আছে। তিনি আরো জানান, নিয়মিত গরুর খাবারের দাম বাড়ছে। সেই সাথে গরুর ঔষুধ ও ভ্যাকসিনের দামও বাড়ছে। এজন্য গরু বিক্রি করা শুরু করি বছর খানেক আগে থেকেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গরু ও বিক্রি করতে পারছি না। কারণ খাবারের দাম বৃদ্ধিতে বাজারে ক্রেতা নেই। বাজারে টাকা নিয়ে গেলেও খাবার পাওয়া যায় না। আমার প্রতিদিন ৮বস্তা ভুষির দরকার। আমি কিনতে পারি ৪থেকে ৫বস্তা। এমন পরিস্থিতে গরুর খাবার কমিয়ে দিয়েছি।
রাজবাড়ী বাজারের গো-খাদ্যের ব্যবসায়ী সাবদুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে থেকে গরুর খাবারের দাম বেশি। কিন্তু এখন আমরা মালই (খাদ্য) পাচ্ছি না। মহাজনের কাছে তিন গাড়ী অর্ডার করলে পাঠায় এক গাড়ী। আবার দাম বৃদ্ধির কারনে বিক্রিও কমেছে। শুনছি গমের দাম বৃদ্ধির কারনে ভুষির দাম বেড়েছে। আর তেলের দাম বাড়ার কারনে বেড়েছে খৈলের দাম।
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক বলেন , জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১২ হাজার গরুর খামার রয়েছে। মুলত বৈষয়িক কারনে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। যার ফলে খামারীরা সমস্যায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা খামারীদের ঘাষ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ গরুকে পর্যাপ্ত সবুজ ঘাষ খাওয়াতে পারলে কেনা খাবারের উপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে।