রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না, আশ্বাস ব্যবসায়ীদের

অর্থনীতি সারাদেশ
শেয়ার করুন...

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে এবং সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। তাই রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন উৎপাদক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ আশ্বাস দেন তারা।
এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন জেলা চেম্বারের প্রতিনিধি, নিত্যপণ্যের আমদানিকারক, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা।

সভায় বাংলাদেশ অয়েল মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘ক্রয়াদেশের ১৫ দিনের মধ্যে তেল সরবরাহ করতে হয়। তাই মিল মালিকদের তেল মজুত করে রাখার কোনো সুযোগ নেই।’
টিকে গ্রুপের পরিচালক সফিউল আথহার তাসলিম বলেন, ‘গুটি কয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর বাজার কারসাজির কারণে গোটা ব্যবসায়ী সমাজকে দায় নিতে হচ্ছে। তবে রমজানে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। মিল মালিকদের কাছে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে এবং বাজারেও কোনো সরবরাহ ঘাটতি নেই।’

সভায় পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন বলেন, ‘সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে।’ একই আশ্বাস দেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা।
সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বাজারে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান জানান।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মুখপাত্র ভোক্তা কন্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘পাইকারী এবং খুচরা বাজারে পণ্যের দামের মধ্যে অনেক ফারাক থাকে। কিছু পণ্যের পাইকারী থেকে খুচরা বাজারে দাম প্রায় দ্বিগুণ। মূলত রাস্তায় ট্রাফিকদের হয়রানি, টোল, ও চাঁদাবাজির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশে আইন থাকলেও এর সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নেই। শুধু জরিমানা করলে সমস্যা নিরসন হবে না। আইনের বাস্তবায়ন করা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্যে বিক্রিতে রশিদ দেওয়া হয় না সেসব পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি হয় বেশি। রশিদ দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পাশাপাশি বাজার তদারকি করবে এফবিসিসিআই। এই জন্য সংগঠনটি একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি নিত্যপণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার দর এবং সরবরাহ পরিস্থিতি যাচাই করবে সরেজমিনে তদারকি করবে। তবে পণ্যের দাম ভোক্তাদের সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়িদেরও দায়িত্ব থাকা উচিত। সরকার মোট ৪৬টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজারে সেই দরে পণ্যগুলো বিক্রি হচ্ছে কি-না তা তদারকি করবে কমিটি। সারাবিশ্বে ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমান।’ বাংলাদেশেও এমন সংস্কৃতি তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তাদের করণীয় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোক্তাদের উচিত প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য না কেনা। এখন ব্যবসায়ীদের স্লোগান হবে- ‘পণ্য কিনি প্রয়োজনে, মূল্য থাকবে নিয়ন্ত্রণে’। এই স্লোগানের পোস্টার দোকানে তথা বাজারে টানিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইর সভাপতি।

কোনো অসৎ ব্যবসায়িদের সভাপতি হতে চান না মন্তব্য করে জসিম উদ্দিন বলেন, তিনি প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সভাপতি, কোনো চোর বাটপারের সভাপতি নন। ভ্যাট ট্যাপ কমালে পণ্যের দাম স্বাভাবিক হওয়ার যে প্রতিশ্রুতি সরকারকে দেওয়া হয়েছিল, সেটি ব্যবসায়িদেরকেই রক্ষা করতে হবে। বাজারে পণ্যের মান অনুযায়ী মূল্য তালিকা টানানোর পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পাকা রশিদ দিতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশ্ববাজারে বিভিন্ন কাঁচামাল, পণ্যের দাম ও জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। দেশের উৎপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই সরকারের উচিত কর ও শুল্ক্ক হার সমন্বয় করা। এতে রাজস্বের ঘাটতি হবে না, বরং সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সাবেক সহসভাপতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, এফবিসিসিআইর পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু, হারুন অর রশীদ, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, এম জি আর নাসির মজুমদার, তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান (টিটো), আবু হোসাইন ভূঁইয়া (রানু) প্রমুখ।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.