কক্সবাজার প্রতিনিধি
যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনকে হোটেল কক্ষে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে সন্দেহজনক আটক হওয়া আশরাফুল ইসলাম (১৮)।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেল ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম। এর আগে সোমবার (২০ আগস্ট) রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
আটক আশরাফুল ইসলাম কক্সবাজার পৌর শহরের ইসলামপুরের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার মো. হাসেম প্রকাশ কাসেম মাঝির ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত সাইফ উদ্দিনের দুঃসম্পর্কের শ্যালক হিসেবে পরিচিত কায়সার হামিদ নয়ন ও তার বন্ধুর মাধ্যমে সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে আশরাফুলের পরিচয় হয়। ঘটনার দিন সাইফ উদ্দিন তার বাইকে করে আশরাফুলকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। বিকেল ৪টার দিকে শহরের বড়বাজার থেকে বাংলা মদ (চোলাই মদ) ও পেয়ারা কিনে হোটেল সানমুনে যান সাইফ উদ্দিন ও আশরাফ। তা পান করে একান্তে সময় কাটানোর পর আশরাফকে নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে করে গোলদীঘিপাড় এলাকায় নামিয়ে দেন।’
মাহফুজুল ইসলাম জানান, ঘণ্টা দুয়েক পর আবারও একান্তে সময় কাটানোর জন্য সাইফ উদ্দিন আশরাফকে হোটেলে ডাকেন। আসতে আপত্তি জানালে আশরাফের সঙ্গে মোবাইলে ধারণ করা অনৈতিক কাজের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায় সাইফ উদ্দিন। পরে রুমে এসে তার অনৈতিক কাজের ভিডিও ডিলিট করে দিতে জোরাজুরি শুরু করে আশরাফ। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হলে একপর্যায়ে আশরাফের গলা চেপে ধরে সাইফ উদ্দিন।
পুলিশ সুপার জানান, এ সময় রক্ষা পেতে পকেটে থাকা ছুরি বের করে সাইফ উদ্দিনকে উপর্যুপুরি আঘাত করে আশরাফ। এতে সাইফ উদ্দিন বিছানায় পড়ে যান। এরপর তাকে মাথায়, পায়েসহ শরীরের নানা স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়। একপর্যায়ে বিছানার চাদর নিয়ে সাইফুদ্দিনের গলায় পেঁচিয়ে ধরে আশরাফ। আবার উঠে যেন আক্রমণ করতে না পেরে সেজন্য প্যান্টের বেল্ট খুলে দুটি হাত বেঁধে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে জামায় লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে সাইফ উদ্দিনের মুঠোফোন ভেঙে ফেলেন এবং মানিব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে হোটেল থেকে সাইফ উদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায় আশরাফ।
তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে বাসে করে টেকনাফ যাওয়ার সময় পালকি নামে এক বাসে তল্লাশি চালিয়ে আশরাফকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যমতে মুঠোফোন, মোটরসাইকেল, মানিব্যাগ ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্ত চলছে।’
সোমবার (২১ আগস্ট) সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়ের হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সাইফ উদ্দিন কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ঘোনার পাড়ার সাবেক আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি এলাকার কাদেদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের গত কমিটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক।