যৌতুকের জন্য হাত-পা বেধে নির্যাতন অতপর গলাকেটে হত্যা

আইন-অপরাধ পরিবেশ সারাদেশ সিলেট
শেয়ার করুন...

জাবেদ তালুকদার, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকেঃ নবীগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূ রাজনা বেগম হত্যাকাÐের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯। গ্রেফতারকৃতরা হল- নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলেও নিহত রাজনার স্বামী জাকারিয়া মিয়া (২৫), মৃত আনোয়ার মিয়া চৌধুরীর ছেলে সফিক মিয়া চৌধুরী ভাড়া বাসার মালিক (৫৬) ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুম(২১)।
সূত্রে জানা যায়- দীর্ঘ ৪ বছর প্রেমের সম্পর্কের পর প্রায় ৬ মাস পূর্বে উভয়পরিবারের সম্মতিতে সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া মিয়ার সাথে পার্শ¦বর্তী পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের মৃত আঃ রহিমের মেয়ে রাজনা বেগমের বিয়ে হয়। গত ১০-১২ দিন পূর্বে রসুলগঞ্জ বাজারের সফিকমিয়া চৌধুরীর মালিকানাধীন একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। গত সোমবার ৩১ জানুয়ারি) বিকালে রাজনা বেগমের মাতাকে দেখতে ওই ভাড়া বাসায় যান। এসময় তাদের বসবাসরত কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। এক পর্যায়ে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে বিছানার ওপর তার মেয়ে রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় তিনি চিৎকার করলে আশাপাশের লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেয়। তাৎক্ষনিক নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাজনার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এ সময় একটি রক্তমাখা বটি দাউদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই রাজনার স্বামী পলাতক ছিল। গত (২ ফেব্রæয়ারী) রাজনা বেগমকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে গলাকেটে হত্যা ও সহযোগিতার অভিযোগ এনে নিহত রাজনার ভাই সুফি মিয়া বাদী হয়ে রাজনার স্বামী জাকারিয়া আহমদ, ভাড়া বাসার মালিক সফিক মিয়া চৌধুরী ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুমসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-৯। গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রæয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জ জেলার সরাজিদখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী রাজনার স্বামীজাকারিয়া মিয়া (২৫) কে গ্রেফতার র্যাব-৯। ওইদিন রাতেই র্যাব-৯ এর অপর আরেকটি আভিযানিক দল নবীগঞ্জ উপজেলার রসুলগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার ৩ ও ৪নং আসামী ভাড়া বাসার মালিক সফিক মিয়া চৌধুরী (৫৬) ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুম (২১) কে গ্রেফতার করে। র‌্যাব-৯ প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়- জাকারিয়া পেশায় একজনসিএনজি চালক, রাজনা বেগমের সাথে ৪ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর গত বছর পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সিএনজি কেনার কথা বলেযৌতুকের টাকার জন্য রাজনা এবং তার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে যৌতুকের টাকার জন্য প্রথমে জাকারিয়া তার স্ত্রী রাজনা বেগমের হাত-পা ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে। ভয়-ভীতি দেখায় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে জাকারিয়া তার শ্বশুর বাড়িতে ফোনদিয়ে টাকা দাবি করে এবং সিএনজি কেনা বাবদ টাকা না দিলে রাজনাকে মেরে ফেলারহুমকি প্রদান করে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় হাত-পা বাঁধাঅবস্থায় সে তার স্ত্রীর মুখ ওড়না দিয়ে বেধে ফেলে যাতে চিৎকার করতে না পারে। পরেরান্না ঘরের ধারালো বটি-দা দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে হত্যা করে ঘরের বাইরে থেকে তালাদিয়ে চলে যায়। (১ ফেব্রæয়ারি) মধ্যরাতের দিকে বাসযোগে রওনা হয়ে ঢাকায় চলে যায় জাকারিয়া। ঢাকায় নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে সে তার একসময়কার কর্মস্থল মুন্সিগঞ্জেরলতব্দী এলাকার ইট ভাটায় আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে গমন করে। অতঃপর গোয়েন্দা তথ্যেরভিত্তিতে গত (৩ ফেব্রæয়ারী) রাত ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার লতব্দী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৯।এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ডালিম আহমেদ বলেন-গ্রেফতারকৃত সফিক মিয়া চৌধুরী ও তার ছেলে আকরাম চৌধুরী মাসুমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই মামলার প্রধান আসামী জাকারিয়াকে কারাগারে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.