
কুমিল্লা-৬ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে মনিরুল হক চৌধুরী ও হাজী ইয়াছিনের সমর্থকদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ এখন চরমে।
চৌধুরীর সমর্থকদের মতে এই এলাকায় স্হায়ী বাসিন্দা ও ভোটার হিসবে দলের মনোনয়ন চাওয়ার শতভাগ অধিকার সংরক্ষন করেন তিনি।
ইয়াছিন সমর্থকদের কথা ১৬বছর দলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি, তাই মনোনয়ন তার প্রাপ্য।
প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কোন বিবেচনায় মনিরুল হক চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন ছিনিয়ে নিলেন?
বর্ষিয়ান জননেতা, কুমিল্লার মুরুব্বী খ্যাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরীর জন্ম সিটি কর্পোরেশনের চৌয়ারা এলাকা নোয়াগায়ে। সদর দক্ষিণ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত এই নোয়াগাও চৌধুরী পৈতিক ভিটা। সদর দক্ষিণ উপজেলার স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। যা বাস্তবায়ন করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
আবার সদর দক্ষিণ পৌরসভার সৃষ্টি উনার হাতে। এই এলাকার উন্নয়নে অঘোষিত রুপকার তিনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক কুমিল্লার -৯ আসনের কেন্দ্রবিন্দু সদর দক্ষিণ উপজেলা ও মনিরুল হক চৌধুরী।
জনাব চৌধুরীর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও চিন্তাভাবনার আলোকে এই সদর দক্ষিণ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। যা কুমিল্লা শহরের উন্নয়নের বিস্তৃতিকে পৌঁছে দিয়েছে লাকসাম পর্যন্ত। কুমিল্লা- নোয়াখালী ফোর লেনের সুবাদে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধারাবাহিকতা বঙ্গোপসাগর বিধৌত নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত।
২০০৮ সালে নির্বাচনের পূর্বে সীমানা নির্ধারণের অংশ হিসাবে তৎকালীন ওয়ান ইলেভেন সরকার আওয়ামীলীগের প্রেসক্রিপশনে কুমিল্লার ১২টি আসন থেকে ১টি কমিয়ে ১১ টি করে। যাতে বলির পাঠা হয় সদর দক্ষিণ উপজেলা। লন্ডভন্ড করে দেওয় হয় কুমিল্লা- ৯ আসনটির স্বকীয়তা।
সীমানা নির্ধারণের অজুহাতে ২০০৮ সালে সদর দক্ষিণ উপজেলাকে বরুড়ার সাথে যুক্ত করা হয়।
২০১৩ সালের নির্বাচনে এই উপজেলাকে জুড়ে দেওয়া হয় নাঙ্গলকোট আসনের সাথে।
২০২৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত কারিগরি কমিটি এই উপজেলাকে চৌদ্দগ্রামের সাথে জুড়ে দেয়।
সদর দক্ষিণ উপজেলাকে ঘিরে সৃষ্ট সাবেক কুমিল্লা- ৯ আসনটি পু্ন:বহালের জন্য মনিরুল হক চৌধুরী পুর্বের ন্যায় এবার আন্দোলন সংগ্রামের ডাক দেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সার্বিক দিক বিবেচনা করে সদর দক্ষিণ উপজেলাকে কুমিল্লা ৬ (সদর) আসনের সাথে যুক্ত করে।
সদর দক্ষিণ উপজেলা বাসিন্দা ও ভোটার হিসেবে মনিরুল হক চৌধুরী দলের মনোনয়ন চেয়েছেন, এটা নিশ্চয়ই উনার অযৌক্তিক আবদার নয়। এটা দয়ার ব্যাপারও নয়। এখানে অপরাধেরও কিছু নেই।কিন্তুু ইয়াছিন সাহেবের কিছু কিছু ভক্ত সমর্থক অতি উৎসাহী হয়ে মনিরুল হক চৌধুরী প্রার্থীতা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন। যা রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বিবর্জিতও বটে।
অপ্রিয় হলেও সত্য, ৮০বছরে পদার্পণ করা, ৬০ বছেরর বণার্ঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী, বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ,বীর মুক্তিযোদ্ধার শৈশব কৈশর,বয়োসন্ধি,ছাত্রনেতৃত্ব,রাজনীতির পদচারণা কুমিল্লা শহরকে ঘিরে।
এই শহরের অনাচে কানাচে প্রতিটি গলি, মহল্লা উনার স্মৃতি বিজড়িতও বটে।
বিগত ১৬ বছর কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতিতে পদ পদবী নিয়ে সক্রিয় ছিলেন আমির উর রশীদ ইয়াছিন। তাই জেলার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে বিভেদে জড়াননি চৌধুরী।
তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলা,লালমাই, নংগোলকোটে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। জেল খেটেছেন, মামলা হামলার শিকার হয়েছে। চৌদ্দগ্রামে বাসপোড়া মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তিনিও আসামী হয়ে জেলে ছিলেন।
যদিও এধরণের পরস্হিতি ও জেলের তিক্ত অভিজ্ঞতা সুভাগ্যবসত আমিন উর ইয়াছিনকে মোকাবেলা করতে হয়নি।
প্রসংগত উল্লেখ্য, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের ১৬ বছরে রয়েছে মনিরুল হক চৌধুরীর আন্দোলন সংগ্রামে ইতিবাচক প্রেক্ষাপট। ২০১৩ সালে সংসদ নির্বাচনে মামলা হামলার ভয়ে যখন প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, দলের সিদ্ধান্তে কুমিল্লা- ১০ আসন থেকে উনাকে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে হয়। এজন্য গ্রেফতার হয়ে জেলেও যান তিনি।
২০২৪ এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরোটরী, জিগাতলায় আন্দোলন সংগ্রামের কর্মপরিকল্পনায় মনিরুল হক চৌধুরীর ধানমন্ডির বাসা ছিলো অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও চৌধুরী সাহেবের সুযোগ্য কন্যা সায়মা ফেরদৌস আন্দোলনের ব্যপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন এখানে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের আসমান কাঁপানো জালাময়ী বক্তব্য এখন ইতিহাসের আর্কাইভে।
ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়কের স্পর্শকাতর এলাকা কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের আন্দোলন ছিলো মনিরুল হক চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে। যা মিডিয়ার কল্যানে ভাইরাল।
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কুমিল্লায় ২০২৪ এর জুন – জুলাই মাসের আন্দোন সংগ্রামে আমিন উর রশীদ ইয়াছিনের অংশগ্রহণের ভিডিও ফুটেজ ও পেপার কাটিং খুঁজে পায়নি বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল।জানাগেছে, তখন আমিন উর রশীদ অসুস্থতার কারনে ঢাকার বাসায় ও ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশে ছিলেন। এবিষয়টিও মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমলে নেওয় হয়।
উল্লেখ্য,সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিগত দিনে মেয়র নির্বাচন পথের কাঁটা ছিলেন হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন ও তার শ্যালক জসিম উদ্দিন।ব্যাবসায়িক পার্টিনারের আদলে তারা শালা দুলাভাই মিলে কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতিকে কুলুষিত করেছেন বলে অভিযোগ।
বিগত মেয়র নির্বাচনে সাক্কুর বিরোধিতা করে নৌকার জয়লাভের পথ সুগম করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে আমিনুর রশীদ ইয়াছিনকে পরাজয়ের স্বাদ বুঝনোর শপথ নিয়েছেন সাক্কু। ইয়াছিনকে দল মনোনয়ন দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হবেন তিনি। তাকে না দিয়ে যদি মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে বিএনপিকে এই আসনটি উপহারের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সাক্কুর এই ঘোষণার মনিরুল হক চৌধুরীর মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচকব ভুমিকা রাখে।
উল্লেখ্য যেকোন উন্নয়ন কর্মকান্ডের মনিরুল হক চৌধুরী অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কাজ ও উন্নয়নকামী নেতা হিসেবে প্রশাসনে রয়েছে তার সুনাম ও খ্যাতি। গত একবছর সবাই যখন মনোনয়নের দৌড়ে লিপ্ত, মনিরুল হক চৌধুরী ব্যস্ত কুমিল্লা উন্নয়ন নিয়ে। কুমিল্লা শহরের যানজট,জলজট নিরসন, নতুন বাস টার্মিনাল, ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ,
ঢাকা – কুমিল্লা সরাসরি রেললাইন স্হাপন, বিমান বন্দর চালু,ডাকাতিয়া নদী দুষণ রোধ,বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প নিয়ে তিনি অনেক দুর এগিয়ে গেছেন।
ইতিমধ্যে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে একবছরের মধ্যে কুমিল্লা শহরকে দৃষ্টিনন্দন,পরিকল্পিত, বসবাসের উপযোগী শহরে রুপান্তর করবেন। এসব দিক বিবেচনয বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও মনে করেন কুমিল্লা -৬ আসনে উল্লেখিত উন্নয়নে মনিরুল হক চৌধুরী বিকল্প নেই। তাই কুমিল্লা -৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীক তার কাছে যথাযথ।
