যশোর সংবাদদাতাঃ
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রাজস্ব আয় বেড়েছে। ২০২১ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগ রাজস্ব আয় হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে গত ১২ মাসে আয় বেড়েছে প্রায় ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮০ টাকা। যা রাজস্ব আয়ে সর্বকালের রেকর্ড হিসেবে ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে ক্যাশ কাউন্টার স্থাপন ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামানের সততার কারণে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ক্যাশ কাউন্টারে অনলাইন কার্যক্রম চালু করায় রাজস্ব আয় আগামীতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, ডা. দিলীপ কুমার রায় তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালীন গত ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আয়ের পরিমান ছিলো ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ৭ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬০ টাকা, আগস্ট মাসে ৭ লাখ ৫ হাজার ৬৫ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৩৯০ টাকা, অক্টোবর মাসে ৯ লাখ ৪৩ হাজার, নভেম্বর মাসে ৯ লাখ ২৩ হাজার ৬৫০ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬৫ টাকা, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৩১০ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ লাখ ১১ হাজার ১৭০ টাকা, মার্চ মাসে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৮ টাকা, এপ্রিল মাসে ৯ লাখ ২৩ হাজার ৬৫ টাকা ও মে মাসে ৮ লাখ ৩৫ হাজার ২৫ টাকা।
এদিকে, ২০২১ সালের ১ জুন হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন ডা. আখতারুজ্জামান। সেই থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত হাসপাতালে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৮৬ হাজার টাক। এরমধ্যে জুন মাসে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮৭ টাকা, জুলাই মাসে ৯ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৫ টাকা, আগস্ট মাসে ১৫ লাখ ২ হাজার ১৫৫ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১৯ লাখ ২৬ হাজার ২২০ টাকা, অক্টোবর মাসে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬০ টাকা, নভেম্বর মাসে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৫ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ১০ টাকা, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ১৮ লাখ ৫০ হাজার ৬৭৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ টাকা, মার্চ মাসে ২২ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৫ টাকা, এপ্রিল মাসে ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৭০ টাকা ও মে মাসে ২১ লাখ ২১ হাজার ৬২০ টাকা।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি ক্যাশ কাউন্টার চালু করার অনুমোদন মেলে। তিনি ক্যাশ কাউন্টারে কার্যক্রম চালুর জন্য নিজস্ব অর্থায়নে দুটি কম্পিউটার ও প্রিন্টার মেশিন কিনে দেন। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি তার কর্মজীবন শেষ হওয়ায় পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম চালু করতে ব্যর্থ হন। পরে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ সাহা। কিন্তু তিনি চেষ্টা করেও ক্যাশ কাউন্টার চালু করতে পারেননি। সূত্রটি আরও জানায়, ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্যাশ কাউন্টার চালুর জন্য জোরালো ভূমিকা নেন। ২০১৯ সালের ৫ জুলাই হাসপাতালের সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য। এরপর হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার টাকা ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যমে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন কর্তৃপক্ষ। তারপরেও গোপনে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়াই করা হতো। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার বিশ্বাস আর্থিক স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করেও সফল হননি। ২০২১ সালের ১২ মে তিনি চাকরি থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর গ্রহণ করেন। ওই বছরের ১ জুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি যোগদানের পর থেকেই আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্যাশ কাউন্টারের রশিদের মাধ্যমে করার নির্দেশনা জারি করেন। জোরালো তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা করার কারণে আর্থিক দূর্নীতি কমতে শুরু করে। একই সাথে বাড়তে থাকে সরকারের রাজস্ব আদায়। বর্তমানে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া সিটিস্ক্যান, এক্সরে, আল্ট্রাসনো ও ইসিজিসহ কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় না। ফলে নগদ টাকা গ্রহণের দিন শেষ হয়েছে।
এই বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, তিনি যোগদানের পর হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে আর্থিকসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি চোখে পড়ে। যা সংশোধন করার জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়। ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নই বলে নির্দেশ দেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রভাবশালী মহলের মাসোয়ারা আদায় বন্ধ করতে সক্ষম হন। সঠিকভাবে তদারকি করার কারণে হাসপাতালের রাজস্ব আয় বেড়েছে। ইতিমধ্যে ক্যাশ কাউন্টারের কার্যক্রম অনলাইনে আনা হয়েছে। ফলে রাজস্ব আরও বাড়বে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।