বিল্লাল হোসেন, যশোর থেকেঃ
রেহেনা খাতুন (৪৬)। বাড়ি যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে। দীর্ঘদিন কোমরের ব্যথায় ভুগছেন। রোববার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা নেয়ার জন্য আসেন। ১০ টাকার টিকিট কেটে অর্থোপেডিক বিভাগে যান। চিকিৎসক তাকে দেখে ব্যবস্থাপত্রে এক্সরে করার নির্দেশনা লিখে দেন। ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হয়ে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দেয়ার জন্য যান। কিন্তু কার্যক্রম বন্ধ বলে এক্সরে ফিসের টাকা জমা নেয়া হয়নি। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রেহেনার মতো অনেক রোগী সরকারি এই হাসপাতাল থেকে এক্সরে করাতে পারেননি। এক্সরে ছাড়াও হাসপাতালের সিটিস্ক্যানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় হাসপাতালের ষ্টুয়ার্ড শাহজাহান, কার্ডিওগ্রাফার দিপক রায়, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি) নুরুজ্জামান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি) মৃত্যুঞ্জয় রায়, ফার্মাসিস্ট জহুরুল ইসলাম ও রতন কুমার সরকারকে কৈফিয়ত তলব করে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কর্মচারীদের ছাড়পত্র দিয়ে সেখানে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সিটিস্ক্যান ও এক্সরে কার্যক্রম চালু রাখতে বিকল্প চিন্তা করা হয়নি।
জানা গেছে, সুলভ ও সহজে চিকিৎসা সেবা নিতে গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বেশির ভাগ রোগীরা সরকারি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসক দেখানোর পর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে এমনিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। আর কার্যক্রম বন্ধ থাকলে তো দালালচক্রের পোয়াবারো। রোববার দালালের খপ্পড়ে পড়ে অনেক রোগী ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে সিটিস্ক্যান ও এক্সরে করাতে বাধ্য হয়েছেন।
রোগীর স্বজন আবুল কালাম, রোকেয়া বেগম ও ফিরোজ হোসেন জানান, রোগীর এক্সরে করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে গেলে তাদেরকে বলা হয়েছে এক্সরে কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে।
বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আন্তার আলী জানান, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তুলনায় সরকারি হাসপাতালে কম টাকায় ডিজিটাল এক্সরে করানো সম্ভব। কিন্তু রোগীদের কথা বিবেচনা না করে কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। এটা রীতিমতো কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনা ছাড়া কিছু না। এক্সরে ও সিটিস্ক্যান পরীক্ষা কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভাগ দুটি বন্ধ রেখে রোগীদের হয়রানী বাড়ানো হচ্ছে। টেকনিশিয়ানরা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে অবশ্যই কার্যক্রম চালু রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের বিকল্প উপায় বের করা উচিৎ ছিলো।
হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টার বিভাগের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশে রোগীদের এক্সরে ও সিটিস্ক্যানের পরীক্ষার টাকা জমা নেয়া হয়নি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তারা কোন রোগীর পরীক্ষার জন্য টাকা নেয়া হবে না।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানান, এক্সরে ও সিটিস্ক্যান বিভাগের দায়িত্বরত কর্মচারীরা অফিসিয়াল কাজে স্বাস্থ্য অধিদফতরে যাওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ১২ ও ১৩ জুন হাসপাতালে এক্সরে ও সিটিস্ক্যান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।