বিল্লাল হোসেন, যশোর থেকেঃ
যশোরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন মহল্লায় সংঘবদ্ধ হয়ে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় দাপট তৈরি করতে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। অনেকেই দামি ব্যান্ডের মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। তারা চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন৷ সামান্যতে যাকে তাকে ছুরিকাঘাতে জখম করছে এসব দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ বলছে, গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে একাধিক বার্মিজ চাকু উদ্ধার হয়েছে। বর্তমানে আটক এড়াতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধের ধরণ পাল্টেছে৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, যশোরের শংকরপুর, বকচর খোলাডাঙ্গা, চাঁচড়া, রেলগেট, তুলোতলা, কলাবাগান, ভাতুড়িয়া শংকরপুর, ইছালী, কিসমত নওয়াপাড়া, ঝুমঝুমপুর, হামিদপুর ঝাউদিয়া, চুড়ামনকাটি, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেল রোড, মুজিব সড়ক, মণিহার, উপশহর, পালবাড়ি, ধর্মতলা, খড়কী, রেল স্টেশন, বিরামপুর, নীলগঞ্জ এলাকাসহ অর্ধশত এলাকায় এরা গ্রুপ তৈরি করেছে। সন্ত্রাসী চক্রের উঠতি সদস্যরা কখনও ভাসমানভাবে, আবার কখনও ভাড়া থেকে পেশা হিসেবে নানা অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। সম্প্রতি যশোরের সুজলপুরের ইরিয়ান, শংকরপুরের আফজাল হত্যাকান্ড, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জমান বাবুল হত্যাচেষ্টা, কলেজ ছাত্র সুলতানপুরের আব্দুল্লাহ, শংকরপুরে টুনি শাওন, উপশহরের এহসানুল হক ইমু হত্যাকান্ডসহ ঘটে যাওয়া ডজনখানেক চাঞ্চল্যকর হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় কিশোর অপরাধী ও উঠতি সন্ত্রাসীরা জড়িত। গ্রুপ ভিত্তিক ওই অপরাধী চক্র শুধু হত্যাকান্ডই নয়, এরা অপহরণ, বোমবাজি, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয়া, চাকু ছুরি হাতে চাঁদাবাজির মত ঘটনায় জড়িত। পুলিশ পিবিআই ও র্যাবের হাতে আটক ওই সব উঠতি সন্ত্রাসীরা অকপটে সব স্বীকারও করেছে। এরা ছাড়াও শহর ও শহরতলীর অর্ধশত স্পটে এরা এখন সক্রিয় গ্রুপ তৈরি করেছে। একই এলাকায় ৩/৪টির মত গ্রুপও রয়েছে।
গত ২ জুন রাতে শহরের শংকরপুর ইসহাক সড়কের একটি সেলুনের সামনে একদল উঠতি বয়সী যুবক নিজেদের ক্ষমতা পরিদর্শনের জন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া করে জনগণের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল। অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করার ঘটনায় র্যাব তাদের আটক করে। এই গ্রুপে সংখ্যায় ছিল ১৬ জন। তাদেরকে তল্লাশী করে চারটি বার্মিজ চাকু উদ্ধার ও কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়।
এর আগে যশোরের বকচরের চাঞ্চল্যকর রাকিব সরদার হত্যাকান্ডের ঘটনায় বকচর, শংকরপুর, সিটি কলেজ পাড়াসহ আরো কয়েকটি এলাকার কিশোর গ্যাঙের ৯ সদস্যকে পাকড়াও করে র্যাব ৬। তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপর যশোরের শংকরপুর থেকে সংঘবদ্ধ একটি কিশোর অপরাধী চক্রকে আটক করে র্যাব ৬ যশোর। আটক ৬ কিশোর একটি অপহরণ ঘটনার জড়িত। তাদের দখল থেকে ধারালো চাকু ও বোমা উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখিত ৫/৭টি ঘটনা ছাড়াও শহর ও শহরতলীর অধিকাংশ এলাকায় প্রতিনিয়তই অপকান্ড ঘটাচ্ছে এই উঠতিরাই। হামলা হত্যার চেষ্টা হুমকির ঘটনাতে এরা জড়িত। হামিদপুর ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গা এলাকার উঠতি সন্ত্রাসীরা যুবলীগ কর্মী ইব্রাহিম হোসেন মিন্টুর উপর হামলা চালায়।
যশোর ষষ্টিতলাপাড়া থেকে বেজপাড়ার মিঠু লেন এলাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেলযোগে এসে ছিনতাই সংঘটিত করে আরও একটি উঠতি সংঘবদ্ধ চক্র। চাঁচড়া এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে মহিদুজ্জামান লিটনের কাছ থেকে চক্রটি ২ লাখ টাকা ছিনতাই করে। সম্প্রতি পাড়া মহল্লায় এইসব চক্র মাদক কারবারেও লিপ্ত হয়েছে।
সংঘবদ্ধ হয়ে অপরাধ করে বেড়ানো উঠতি চক্রগুলোর ঘটিয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ কৌশলী অভিযান শুরু করেছে। যশোর শহরের আইন শৃংখলার আরও উন্নতি ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে ক্রাইম পয়েন্ট বাছাই করে করে অভিযান চলছে। গত ৩ দিনে যশোরের বকচর, শংকরপুর, রেলগেট, খড়কী কলাবাগান, চাঁচড়া রায়পাড়া, ধর্মতলা, খোলাডাঙ্গা, পুলেরহাট, বিরামপুর, হামিদপুর, পালবাড়ি, তেঁতুলতলা, রেলস্টেশন, শেখহাটি, ষষ্টিতলাপাড়া এলাকায় দফায় দফায় কন্ডোন অভিযান পরিচালনা করেছে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। নতুন নতুন ক্রাইম পয়েন্ট ও ডেরা সনাক্ত করতেও কাজ শুরু করেছে।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী, কিসমত নওয়াপাড়া, এনায়েতপুর, চাঁচড়া, ঝুমঝুমপুর, ঝাউদিয়া, চুড়ামনকাটিতে আরও কয়েকটি গ্রুপ এখন দেশীয় অস্ত্র চাকু ছুরি দখলে রেখে সরব বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকেও এখন নজর পুলিশের।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলছে। গত কয়েকদিনে অর্ধশত সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এরপর অন্যরা অপরাধের ধরণ পাল্টেছে। তাদের দমনে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে৷