মাসিককালে পুরোনো কাপড়ই ব্যবহার করে ৫০% কিশোরী

আইন-অপরাধ জাতীয় সারাদেশ স্বাস্থ্য
শেয়ার করুন...

মাসিকের সময় সারা জীবন পুরোনো কাপড়ই ব্যবহার করেছেন ময়না বেগম। বাজারে যে স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায়, তা তিনি জেনেছেন অনেক পরে। জেনেও খুব একটা লাভ হয়নি, কারণ কেনার সামর্থ্য নেই।
কাপড়ই তুলে দেন ময়না। গৃহকর্মের কাজ
করে কোনোরকমে সংসার চলে। ময়না প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানাটানির সংসারে প্যাড কেনার টাকা কই।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮’ (গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত) অনুযায়ী, দেশে মাসিকের সময় ৪৩ শতাংশ কিশোরী ডিসপোজিবল প্যাড, ৫০ শতাংশ পুরোনো কাপড় এবং বাকিরা নতুন কাপড় ও তুলা ব্যবহার করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২৯ শতাংশ ডিসপোজিবল প্যাড ও ৬৪ শতাংশের বেশি পুরোনো কাপড় ব্যবহার ব্যবহার করে।

আজ শুক্রবার (২৮ মে) মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস। ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিনটি সামনে রেখে দেশে নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, দুটি কারণে দেশে নারীদের মধ্যে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের হার কম। প্রথমত, মেয়েদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যে নিরাপদ হওয়া দরকার, তা সমাজে খুব কম ভাবা হয়। দ্বিতীয় কারণ, দোকানে ১০টির এক প্যাকেট স্যানিটারি প্যাডের দাম ১০০ টাকার বেশি, যা সীমিত আয় ও দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক শাহনাজ সুমি বলেন, পরিবারের যে বাজেট থাকে, তাতে মেয়েদের এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির জন্য কোনো বরাদ্দ থাকে না। তিনি বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম ৫০ টাকায় নামিয়ে আনা দরকার। এ জন্য সরকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও অন্যান্য কর প্রত্যাহার করতে পারে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দাম কমাতে পারে।

কোম্পানিগুলো বলছে, এখনকার কর কাঠামোতে ২০০ টাকা খুচরা মূল্যের এক প্যাকেট প্যাডে ২২ টাকার মতো ভ্যাট ও ৫ টাকার বেশি অন্যান্য কর রয়েছে। দেশের তিনটি স্যানিটারি প্যাড উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানি বলছে, দাম কমাতে কর ছাড় দিতে পারে সরকার।

সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্যানিটারি প্যাডের কাঁচামাল আমদানিতে করভার ৬৩ শতাংশের বেশি। এটা কমিয়ে দিলে প্যাডের দাম কমানো যাবে।

এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবসায় পরিচালক মো. কামরুল হাসান ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা জেসমিন জামানও কর ও ভ্যাট কমানোর ওপর জোর দেন। তিনটি কোম্পানিই জানায়, সীমিত আয়ের মানুষের জন্য তাদের বিশেষ দামের প্যাড রয়েছে।

মাসিকের সময় স্বাস্থ্যসম্মত প্যাডের বদলে পুরোনো কাপড় ব্যবহারে নারীদের চুলকানি, প্রদাহ, প্রস্রাবে সংক্রমণসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সাকিয়া হক। চিকিৎসার জন্য যাওয়া নারীরা প্যাড ব্যবহার একেবারেই কম করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ভালো মানের প্যাড ব্যবহারে একজন কিশোরীর মাসে আড়াই শ টাকার মতো লাগে। নিম্ন আয়ের পরিবারে এ টাকা অনেক বেশি।
সূত্রঃ প্রথম আলো

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.