লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
‘শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতির বাস্তবায়ন অনিবার্য’ -এ শ্লোগানকে সামনে রেখে লাকসামে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) লাকসাম পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মু. আতিকুর রহমান বলেন, দেশের সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী নারী-পুরুষ। সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু শ্রমিকদের কার্যকর উন্নয়নের বিষয়ে ভাববার মতো সরকার আমরা পাইনি। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে, সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। মূলতঃ মানব রচিত বিধান দিয়ে মানুষের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মহান আল্লাহর বিধান দিয়েই এর সমাধান সম্ভব।
তিনি বলেন, অন্যান্য শ্রেণী পেশার মানুষের পাশাপাশি এদেশে দীর্ঘদিন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুমের শিকার হয়েছেন শ্রমিকরা। আমরা আর শ্রমিক নিপীড়ক সরকার কখনো দেখতে চাই না।
আতিকুর রহমান বলেন, অনেকেই শ্রমিকদের ব্যবহার করে গাড়ি-বাড়ি, বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা কোন শ্রমিককে আর ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হতে দেব না। আমরা শ্রমিক শোসন করবো না, করতে দেব না। যেখানেই শ্রমিকদের উপর জুলুম হবে, শোষণ করা হবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, পুলিশ যদি রেশন পেতে পারে; শ্রমিকদেরও রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য যারা আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীকে ব্যবহার করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, আবু সাইদ, মুগ্ধসহ শতশত ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা ক্ষমতা কুক্তিগত রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে আমরা তাদেরকে বিনা বিচারে দেখতে চাই না।
সমাবেশের প্রধান বক্তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি ড. সৈয়দ একেএম সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, দেশের অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকদের বৈষয়িক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে। এটা তাদের একমাত্র এজেন্ডা। আর শ্রমিক কল্যাণের এটা হচ্ছে দ্বিতীয় এজেন্ডা। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রথম কাজ হচ্ছে শ্রমিকদের আখেরাতের কল্যাণে কাজ করা। যেটা বাংলাদেশের অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের এজেন্ডায় নাই।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন একটি সুষ্ঠু ভারসাম্যতায়। এ ভারসাম্য হচ্ছে সকলকে সমান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি না দেয়ার ভারসাম্যতা। সবাই যদি কোটিপতি হয়, মন্ত্রী হয়, তাহলে মন্ত্রীর ড্রাইভার কে হবে! বড়লোকের কাজ কে করবে! কেউ কারো কমান্ড মানবে না। এখন কথা হচ্ছে কেয়ামতের বিচার হবে মানুষের যোগ্যতার, সম্পদের। আল্লাহ মানুষকে যা কিছু রিজিক দিয়েছেন তার হিসাব তিনি নিবেন। আজকে দুনিয়াতে আপনার সম্পদ কম হতে পারে, আক্ষেপ থাকতে পারে কিন্তু কেয়ামতে আপনার হিসাব সহজ। জান্নাতে যাওয়া আপনাদের জন্য সহজ। ধনীদের পাঁচশ বছর আগে গরিবরা জান্নাতে যাবে।
মানুষ সুখ খোঁজে দালান কোঠায়, বাড়ি-গাড়িতে। কিন্তু এখানে আসলে কোন সুখ নেই। আর মহান আল্লাহ বলেছেন সুখ রয়েছে একমাত্র জান্নাতে।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন লাকসাম পৌরসভা সভাপতি একেএম শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি ডাঃ আবদুল মুবিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি মু. খাইরুল ইসলাম, লাকসাম পৌরসভা জামায়াতের আমীর মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী, উপজেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন লাকসাম উপজেলা সভাপতি মু. দেলোয়ার হোসেন ও লাকসাম পৌরসভা সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, পৌরসভা জামায়াতের সাবেক আমীর মু. আবুল হাশেম, শ্যামপুর থানা আমীর আব্দুর রব ফারুকী, লাকসাম উপজেলা সেক্রেটারি মু. জুবায়ের ফয়সাল, পৌরসভা সহ-সেক্রেটারি নুরে আলম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন জেলা অফিস সম্পাদক ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা শাখা আয়োজিত সমাবেশে দুই সহস্রাধিক শ্রমিক নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
ছবির ক্যাপশন-
কুমিল্লার লাকসামে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মু. আতিকুর রহমান।