গঙ্গাচড়া সংবাদদাতাঃ
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার হতদরিদ্র এক মায়ের মেধাবী সন্তান শিক্ষার্থী খালিদ হাসানের স্বপ্ন পূরণের সমস্ত দায়িত্ব নিলেন গংগাচড়া উপজেলা প্রশাসনের মানবিক নির্বাহী অফিসার মোঃ এরশাদ উদ্দিন পিএএ ।
গংগাচড়া ইউএনও ফেসবুক আইডিতে গত দুদিন আগে এক পোস্টে জানা গেছে, খালিদ নামে এক তরুণ মেধাবী যুবকের জীবন যুদ্ধে দারিদ্র্যের কলঙ্কতিলক অধ্যায়ের কাহিনী। খালিদ হাসানের বাড়ি গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নে।বাবা রিকশা চালক প্রায় ১০/১২ বছর আগে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা সংসার শুরু করেন। কিছুদিন তাদের খোঁজ খবর নিলেও এক পর্যায়ে মা’ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তারা আশ্রয় নেন নানা বাড়িতে। এরপর মা’সহ মামা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু মামার সংসারেও অভাবের করাল গ্রাস। খেয়ে না খেয়ে চলে মা-ছেলের জীবন।
একপর্যায়ে টাকার অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় খালিদের পড়াশোনা। দুঃখ যেন তাদের নিত্য সঙ্গী তাই ভেঙে যেতে বসে আর্কিটেক্ট হবার স্বপ্ন। অমানিশার অন্ধকারে আটকে যাচ্ছিল বেঁচে থাকা আর ফিকে হয়ে আসছিল মা-ছেলের স্বপ্ন। মা’ছেলে শেষ পরিনতি তাদের সামনে উপস্হিত দারিয়ে আছে দেখতে পেয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নিলেন দেখা করবেন ইউএনওর সাথে।এ যাবত মা’অনেক কষ্টে ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করাতে পারলেও পরবর্তীতে লেখাপড়া ও সংসারের খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েন।
এ অবস্থায় সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে খালিদ ও তার মা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দেখা করে কষ্টের কথা জানান।এরপরই তাৎক্ষণিক খালিদ হাসানের পড়াশোনার খরচ চালানোসহ তাকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দীন।কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্থাপত্য প্রকৌশল (আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের ডিপ্লোমা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ। তার স্বপ্ন তিনি দেশের একজন বড় স্থপতি (আর্কিটেক্ট) হবেন।
উপজেলা প্রশাসনের মানবিক সহায়তা তহবিল থেকে খালিদ হাসানের পড়াশোনার খরচ বহনের এমন কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দীন পিএএ।খালিদ বলেন, ‘ইউএনও স্যারের সহায়তার আশ্বাসে পড়াশোনার খরচ চালানোর দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। আমি স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদ উদ্দীন তার দেয়া স্টাটাসে বিস্তারিত তুরে ধরে বলেন, সোমবার খালিদ ও তার মা আমার অফিস রুমের সামনে দেকা করার জন্য সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন।
আমি প্রশাসনিক কাজে বাইরে থাকায় তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে। দুপুরে আমি রুমে ঢুকতেই আমার পেছনে তার মা প্রবেশ করে । আমি তার দিকে তাকালাম। তার দুচোঁখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল। খুব দুর্বল মনে হচ্ছিল তাকে জিজ্ঞেস করলাম- কী হয়েছে আপনার? কান্না করছেন কেন? বসতে দিয়ে কি সমস্যা তা খুলে বলতে বলি। তখনও ওই মা” কথা বলতে পারছিলেন না। সব ঘটনা শুনালেন জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার উপক্রম এক নতুন অন্ধকারেন গল্প। তারা কাল রাত থেকে মা’ছেলে দুজন কিছুই খাননি। এমন অবস্থা প্রায়ই হয় তাদের। তারপর তিনি তার ছেলের কথা বললেন।ছেলেটা লজ্জায় আমার রুমে আসেনি। নিচে দাঁড়িয়েছিল তাকে নিয়ে আসতে বললাম। তখন চরম বাস্তবতা সামনে দাড়িয়ে আছে দেখতে পেয়ে আমারও চোখগুলো ছলছল করছিল জলে। তবে সব শুনে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল যে,আমার নিজ কর্মস্হলে গন্ডির মধ্যে থেকে আজ এমন অসহায় মা -ছেলের অন্ধকার জীবনে হয়ত একটু আলো দিতে পারব ভেবে।
এরশাদ উদ্দীন বলেন, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক তাদের জন্য একটা ঘর করে দেওয়া হবে। আপাতত তাদেরকে এক মাসের চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক জিনিস দেওয়া হয়েছে।মানবিক সহায়তা বক্সের প্রাপ্ত অর্থ থেকে ছেলেটার পড়াশোনা, থাকা, খাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন করা হবে।