মাছের রাজ্যখ্যাত সুনামগঞ্জের হাওর গুলোতেই মাছের সঙ্কট

আবহাওয়া পরিবেশ সারাদেশ সিলেট
শেয়ার করুন...

মোঃ আতিকুর রহমান, সুনামগঞ্জ থেকেঃ
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরসহ এ জেলার ছোট-বড় সব কটি হাওড়েই মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মাছের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে হাওর পাড়ের জেলেরা। যাদের জীবন-জীবিকা এই হাওড়ের মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। এই মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন এনজিও ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋন নিয়ে মাছ ধরার জাল ও নৌকা ক্রয় করে অনেক আশা-আকাঙ্খ্যা নিয়ে হাওরে যায় মাছ ধরতে। ইচ্ছা থাকে হাওড়ে মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবারের ভরনপোষনের চাহিদা মিটিয়েও ঋনের টাকা পরিশোধ করবে।কিন্তু তাদের সকল আশাতেই যেনো গুড়েবালি। হাওরগুলোতে পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। একদিকে পরিবারের ভরন-পোষনের চিন্তা আর অপরদিকে সুদী ঋনের চাপে দিশেহারা হয়ে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো চরম বিপাকে রয়েছে। অনেকেই আবার জীবন জীবিকার তাগিদে পরিবার পরিজন নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে।
সরেজমিনে জেলার হাওর পাড়ে অবস্থিত জয়পুর, গোলাবাড়ি, ছিলানী তাহিরপুর, শ্রীয়ার গাও, মন্দিয়াতা,তরং, শিবরামপুর,ইন্দ্রপুর,বিনোদপুর, পানিয়াখালি, শক্তিয়ারখলা, বারুংকা, বালিজুরী, লামাগাও, রামসিংহপুর, হুকুমপুর,সন্তোষপুর,শিবপুর,ভবানীপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে দলে দলে পাড়ি জমিয়েছেন এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকায় অবস্থানরত জয়পুর গ্রামের মৎস্যজীবী তছদ্দুল মিয়া মুঠোফোনের মাধ্যমে জানান, হাওরে মাছ ধরার লগে লগে গেরামে ছোটখাটো একটা মুদির দোকান আছিলো আমার। অনেক আশা লইয়া হাওরে মাছ ধরার লাইগ্যা ঋণ কইরা জাল নাও কিনছিলাম।এখন হাওরে মাছ না থাকায় মাছও মারতে পারিনা আবার দোকানেও বিকিকিনি নাই। অন্য কোন কাজকাম না থাকায়, দোকানের মালামাল সব খাইয়া শেষ করছি। এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়া পরিবার নিয়া ঢাকায় আইলাম।এইখানেও মানুষ আর মানুষ তেমন কামকাজ নাই বৌ-বাচ্ছা নিয়া বড়ই বিপদে আছি।একই গ্রামের আব্দুল আলী মিয়া জানান, কিতা কনমু ভাই, সব শেষ, ভিটে বাড়ি সব বেইছ্যা ঋণের বোঝা নিয়া ঢাকায় আইলাম, এহন দেখি এইখানেও কামাই নাই।
পাশর্^বর্তী শ্রীয়ারগাও গ্রামের মৎস্য ব্যাবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, মাছের কারবার(ব্যাবসা)করতাম । বড় আশা কইরা ঋণ কইরা জাউল্যাদের(জেলেদের) দাদন দিছিলাম মাছ কিনার আশায়। কিন্তু জাউল্যারা( জেলেরা)মাছ না পাওয়ায় ব্যবসা বন্ধ, পুঁজি সব খাইয়া ঘর-বাড়ি বেইচ্ছা পরিবার নিয়া ঢাকায় আইলাম, দেখি কিতা অয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল বলেন হাওরে ব্যবস্থাপনার অভাব, অবাধে মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে মা ও পোনামাছ নিধন ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণসহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারণে ধীরে ধীরে হাওরে মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এখনো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়া হলে উপজেলার সবকটি হাওর হুমকির মুখে পড়বে। এবং হাওর পাড়ে বসবাসরত মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী হাওরপাড় ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে দূর-দূরান্তে পাড়ি জমাবে।
জেলার সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল তাহিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, তাহিরপুর উপজেলাটি মাছের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু ব্যবস্থাপনার অভাবে হাওরগুলোতে মাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। একদিনে চলছে পোনামাছ নিধণ অপরদিকে মাছের অভয়াশ্রমগুলোকে সঠিকভাবে রক্ষনাবেক্ষন না করার কারনে ধীরে ধীরে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। এ বছর আবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ফলে দেরীতে হাওরের পানি বৃদ্ধি হওয়ায় সঠিক সময়ে মাছের বংশবৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। আমরা উপজেলা মৎস্য অফিস হাওড়ের মাছ বৃদ্ধির সর্বোচ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতি বছরই আমরা নার্সারীর মাধ্যমে দুইটি বিলে ১ লক্ষ টাকার রেনু থেকে মাছের পোনা ফোটানোর পর পোনামাছগুলো একটু বড় হলেই সেগুলো হাওড়ে অবমুক্ত করি।
তিনি আরো জানান, মাছ ধরার উপরে এ উপজেলার ৯০ ভাগ মারুষের জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবেই জেলেরা এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জেলা শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন বলে অভিমত এই কর্মকর্তার।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.