মনপুরা সংবাদদাতাঃ
আমন আবাদের শুরুতেই সরকার ইউরিয়া সারের ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভোলার মনপুরা উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা।ডিজেল ও ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ফসল উৎপাদনের ওপর। একদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ট্রাক্টর দিয়ে কৃষকের জমি চাষে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।আন্য দিকে শ্রমিক এর দাম বাড়ছে ।
কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় এখন একর প্রতি জমিতে আমন আবাদ করতে খরচ বাড়বে ৭শ থেকে ৮ শ টাকা। জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি একর জমিতে আমন আবাদে খরচ বাড়বে ১৫ শ থেকে ১৭ শ টাকা। এতে ভরা আমোন মৌসুমে জমি চাষে কৃষকদের ব্যয় বেড়েছে। যাহা একর প্রতি খরচ বাড়ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।
জমি চাষের পাওয়ার টিলার মালিক আলামিন চৌকিদার জানান, ডিজেল যখন প্রতি লিটার কিনছেন ৮০ টাকা দরে।তখন একর জমি চাষে নিতেন ৬ হাজার টাকা।৬ আগষ্ট সকাল থেকে যখন ডিজেল ১১৫ টাকা লিটার কিনতে হচ্ছে তখন থেকে জমি চাষের দাম বাড়ছে। এতে চাষিদের জমি চাষের প্রতি একরে ব্যয় বেড়েছে ১৫ শ টাকা ।যাহা একর এখন নিতে হচ্ছে ৭ হাজার ৫ শ টাকা।
কৃষক রহিম হাওলাদার জানান, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ট্রাক্টর চালকরা আগের দামে এখন আর হালচাষ করতে আসে না আমি খুব দুর-চিন্তায় আছি।আমার মত প্রান্তিক কৃষকের পক্ষে সম্ভব না হাল চাষ করার।
রহমানপুর গ্রামের চাষি শাহে আলম জানান,জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ১ একর জমি চারা রোপণের উপযোগী করতে হাল চাষে খরচ হতো ৬ হাজার টাকা।ডিজেল এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে চাষের খরচ ৭ হাজার ৫ শ টাকা । শুধু মাত্র চাষের জন্য খরচ বেড়েছে ১৫ শ টাকা। এছাড়া, অন্যন খরচতো আছেই।
শংকর চন্দ্র দাশ নামের এক কৃষক বলেন, প্রতি একর জমিতে আমন আবাদ করতে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় ১০০ থেকে ১২০ কেজি। আর কীটনাশক প্রয়োগ করতে খরচ হয় ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। জমিতে হাল চালানো, ধান রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত সারসহ সব মিলিয়ে প্রতি একর জমিতে আমন আবাদে খরচ হতো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা । আর আমন ফলন হয় প্রতি একরে ৩০ থেকে ৪০ মণ। ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তোলাটাও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে হঠাৎ জ্বালানি তেল ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি একরে বাড়তি খরচ হবে ২৫ শ থেকে ৩ হাজার টাকা। তাই ধানের ভালো দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে তাদের।
সাকুচিয়া আবদুল আল ইসলাম জ্যাকব কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনির হোসেন বলেন, দেশে ডিজেলের মোট চাহিদার বড় একটি অংশ ফসল উৎপাদন ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। তেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানোর কারণে ফসল উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে প্রায় ৩০ শতাংশ; ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি অর্থনীতি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,মনপুরা উপজেলা ১২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি থাকলেও এ বছর ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ডিএপি সারে ২০ ভাগ ইউরিয়া থাকে, ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির কারণে ডিএপি সার ব্যবহার করলে কৃষকের অর্থনৈতিক সমস্যাটা কিছুটা লাঘব হবে।
মনপুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন বলেন, সার ব্যবসায়িদের আগের মূল্যের মজুত শেষ হওয়ার পর নতুন মূল্যে সার বিক্রি করতে বলা হচ্ছে।তবে কোন খুচরা ব্যবসায়ী যাতে করে সরকারি মূল্য তালিকা বাহিরে সার বিক্রি করতে না পারে সেই দিকে আমাদের মনিটরিং টিম অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে কেউ সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তেলের দাম বৃদ্ধির কারনে ফসল উৎপাদনে এবার ব্যয় কিছুটা বাড়বে।
ক্যাপশন-উৎপাদিত ধানের দাম না বাড়লে লোকসান গনতে হবে কৃষদের এমনটাই দাবি সচেতন মহলের ।
মনপুরা দক্ষিন সাকুচিয়া থেকে তোলা ছবি