অনলাইন ডেস্ক : মূল্য বৃদ্ধির অস্বাভাবিক প্রবণতা ঠেকাতে চাল ও আলুর পর এবার বাজারে সবজির দরও নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দাম নির্ধারণ করে দিলে বাজারে এসব পণ্যের দাম আর অস্বাভাবিক হবে না বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ মনে করছে। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন সবজির পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দর পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পণ্য উৎপাদনে কৃষকের খরচ কত, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব সমন্বয় করে কিছুদিনের মধ্যেই সবজির দর নির্ধারণ করে দেয়া হবে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহম্মদ ইউসুফ জানান, বাজারে সব সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের একটা দৌরাত্ম্য থাকে। এরাই বাজারকে অস্থির করে। এদের দৌরাত্ম্েয উৎপাদনকারী কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের নানা উদ্যোগ এবং অভিযানেও তা বেশিরভাগ সময় ঠেকানো যায় না। ফলে বাজারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বারবার সমালোচনার মুখে পড়ে। এসব কারণেই এবার বাজারের নানা প্রকার সবজির দর নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বাজারে সবজির দর ঠিক করে দেয়ার পর বাজার অস্থির হলে মনিটরিং করা সহজ হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টরা বাজার মনিটরিং জোরদার করবে। এতে সাধারণ ক্রেতারা উপকার পাবেন।
মোহম্মদ ইউসুফ বলেন, সরকার আলু ও চালের যে দর ঠিক করে দিয়েছে তা হয়তো শতভাগ কার্যকর হয়নি, তবে অস্বাভাবিক হারে বাড়ারও সাহসও পায়নি। হয়তো সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি না হয়ে ৪০ অথবা দুই টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ওই সময় আলুর দর ঠিক করে না দিলে হয়তো মধ্যস্বত্বভোগী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে সাধারণ ক্রেতাদের ৭০ টাকায় কিনে খেতে হতো। দর নির্ধারণ করে দেয়ার ফলে এটুকু উপকার তো সাধারণ মানুষ পেয়েছে। সরকারি হিসাবে, বছরে দেশে সবজির চাহিদা এক লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন করা হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় ১০ লাখ মেট্রিক টন সবজি বেশি উৎপাদন করা হলেও দামের ক্ষেত্রে স্বস্তি পায়নি দেশের সাধারণ মানুষ। অপরদিকে বেশি উৎপাদনের ফলে কৃষকও তার উৎপাদন খরচ পান না। এতে একদিকে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছেন না, অপরদিকে উৎপাদিত সেসব সবজি সাধারণ ক্রেতাদের মাত্রাতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে।
এর ফলে কৃষক ও ক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাঝখান থেকে ফায়দা লুটে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। মধ্যস্বত্বভোগীদের এই দৌরাত্ম্য ঠেকাতেই সরকার চাল, আলুর পর এবার সবজির দাম নির্ধারণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, বাজারে পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেয়ার এখতিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের, বিশেষ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যদি সবজির দর নির্ধারণ করে দেয়, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ উপকার পাবেন। যদি নির্ধারিত দরটি কার্যকর না হয় তাহলে সাধারণ মানুষ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ পেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। জেলা প্রশাসনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন