মদ, জুয়া ও ক্লাব নিয়ে গতকাল হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পাল্টাপাল্টি দোষারোপে অংশ নেন সরকার ও বিরোধীদলীয় এমপিরা। আলোচনার সূত্রপাত করেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি। পরে ওই বিতর্কে অংশ নেন সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় এমপিরা। তারা রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবের মদ-জুয়ার আসরের কঠোর সমালোচনা করেন। অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু আলোচনার সূত্রপাত করেন। পরে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপি’র হারুনুর রশীদ, তরীকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেয়ার জন্য বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এতো বোট ক্লাব, জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার চালু করেছিলেন। যারা অপরাধের শুরু করেছে, তাদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি’র মো. হারুনুর রশীদ বলেন, আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোনো মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেবো। তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি। এই সব ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কোনো দলের নন, উনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এসব খুঁজে দেখা হোক। এমপি হারুনের বক্তব্যের সময় হৈচৈ শুরু করেন সরকারি দলের সদস্যরা। এ সময় শেখ সেলিম আবারো ফ্লোর নেন। তিনি বলেন, লাকী খানের ঝাঁকি নাচের কথা কী ভুলে গেলেন? হিযবুল বাহার। জিয়াউর রহমান এগুলো করেছিল। বর্তমান সরকার কোনো মুসলমানকে মদের পারমিশন দেয়নি। বন্ধ করতে গেলেই আপনারাই তো চিল্লাচিল্লি করবেন। বলবেন, ফরেনারদের পারমিশন লাগবে। এর আগে আলোচনার সূত্রপাত করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কয়েকদিন ধরে উত্তরা বোট ক্লাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কে করলো এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা? শুনেছি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে এই ক্লাবের সদস্য হতে হয়। এতো টাকা দিয়ে কারা সদস্য হয়? আমরাতো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এতো ইনকামও করি নাই। তিনি আরো বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এতো মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হন? এতো টাকা কোথা থেকে আসে? অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, রাজধানীর গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়। সেখানে ড্যান্স হয়। মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব ক্লাবের সদস্য কারা হয়? বোট ক্লাবের জায়গার একজন মালিক আছে। তিনি যেতেও পারেন না। এসব দেখতে হবে। তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, হারুন সাহেবের সদস্য পদ আজই ছেড়ে দেয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক। পরে জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনো সময় কোনো ধরনের মদের লাইসেন্স বা এ ধরনের ফরেন লাইসেন্স এর অনুমোদন দেননি। ২১ বছর আইনটাকে অপব্যবহার করে আজকে এটা করা হয়েছে। একজন মানুষকে একটা ক্লাব থেকে ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিতে হয়। ডাক্তার সার্টিফিকেট দেন যে উনার জীবন রক্ষার জন্য মদের প্রয়োজন প্রতিদিন। এই সার্টিফিকেট নিয়ে লাইসেন্স তৈরি করা হয়। এই লাইসেন্স এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন ৭ বোতল মদ তার বাসায় রাখতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি এই লাইসেন্সটা দিয়েছিল। বিদেশি যারা আসবে তাদের অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য তাদের মদ খাওয়ার জন্য এটা করেছেন। এটা অনেক ইসলামিক রাষ্ট্রে আছে। তিনি আরও বলেন, অভিনেত্রী পরীমনির ব্যাপারটায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মায়ের মমতায় রেসপন্স করেছেন। আমাদের নাসির যদি (প্রেসিডিয়াম মেম্বার) এটা করে থাকেন, তাহলে আইন আইনের গতিতে চলুক। আইনে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে আমাদের থেকে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কারো ওপর, কারো গায়ে হাত দেয়ার অধিকার, কাউকে অপমান করার এখতিয়ার কেউ কাউকে দিয়ে রাখে না। একজন পুলিশ যেমন রাখে না, একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করতে পারে না। এ সময় নিখোঁজ রংপুরের ইসলামিক বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে দ্রুত খুঁজে বের করার দাবি জানান বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ।