মতলব উত্তরে একই পরিবারের ৭ হত্যার ২৫ বছর; আজও থামেনি স্বজনদের কান্না

আইন-অপরাধ চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিবেদন বিশেষ রচনা বলি সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মতলব সংবাদদাতাঃ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার জোড়খালী গ্রামে ১৯৯৭ সালে জমি সংক্রান্ত বিরোধীতায় একই পরিবারের ৮ জনকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। আজ রোববার ২৯ মে ২০২২ ইং নৃশংস এ হত্যাকান্ডের ২৫ বছর আজ। ওই পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য মাজেদাসহ স্বজনের কান্না থামেনি আজও।

জানা যায়, উপজেলার ছেংগারচর পৌর সভার জোড়খালী গ্রামের প্রধান বাড়িতে ছালামত প্রধানের সাথে একই বাড়ির হযরত আলী মিস্ত্রীর সাথে ৫ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ ছিল।

সেই বিরোধের জের ধরে ১৯৯৭ সনের ২৯মে গভীর রাতে ছালামত প্রধান, তৎকালীন স্থানীয় ইউপি সদস্য সফিউল্লাহ ভূইয়া, তার ছেলে মানিক ভূইয়া, আদম আলী প্রধান, হাবিব উল্লাহ ভূইয়া,জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া, আলী আজ্জম ও তার স্ত্রী ভানু বেগম, মন্টু মিয়া, মুজাম্মেল প্রধানসহ আরো কয়েকজন মিলে ৭ জনকে হত্যা করে।

এরা হলেন, হযরত আলী মিস্ত্রী ও তার স্ত্রী, ছেলে হুমায়ুন ও তার স্ত্রী, ছেলে সোহাগ, মেয়ে সাজেদা, মনি আক্তার এই ৭ জন। এদের মধ্যে হুমায়ুনের স্ত্রীর গর্ভে থাকা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সন্তান ছিলো এই মিলে হত্যা হয় ৮টি।

ঘটনার দিন ওই পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য হযরত আলী মিস্ত্রীর মেয়ে মাজেদা আক্তার ঢাকা থাকায় সে প্রাণে বেঁচে যায়। পরে সে বাড়িতে এসে ছালামত প্রধান ও তার স্ত্রী ওয়াহেদুন্নেছা, ইউপি মেম্বার সফিউল্লাহ ভূইয়া ,ছেলে মানিক ভূইয়া, আলী আজ্জম ও তার স্ত্রী ভানু বেগম, আদম আলী, হাবিব উল্লাহ ভূইয়া, মন্টু মিয়া, মোজাম্মেল হকসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করে মতলব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় ছালামত প্রধান ,ইউপি সদস্য সফিউল্লাহ ভূইয়া, আলী আজম এই ৩ জনের ফাঁসির রায় হয়। মন্টু মিয়া, মানিক ভূইয়া, হাবিব উল্লাহ ভূইয়া, ভানু বেগম, ওয়াহেদুননেছা, মুজাম্মেল মিয়া যাবৎজীবন সাজা প্রাপ্ত হয়।

এদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামি ছালামত প্রধান আত্মসমর্পন করলে বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করেন। পরে জেল হাজতে থাকাকালীন অবস্থায় সে মারা যায়।

ছালামত প্রধানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ওয়াহেদুন্নেছা কাশিমপুর কারাগারে থেকে অন্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কারাগার পরিদর্শনে গেলে তার এ অবস্থা দেখে ও বার্ধক্যজনিত কারনে প্রান ভিক্ষা দেয়। ঢাকায় ছেলেদের বাসায় থাকলে ও লজ্জায় আর বাড়ি আসে না। ইউপি সদস্য সফিউল্লাহ ভূইয়া কারাগারেই মৃত্যুবরন করেন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আলী আজ্জম ও মন্টু কারাগারে মৃত্যু হয়েছে। আলী আজ্জমের স্ত্রী ভানু বেগম এখনো কারাগারে, যাবজ্জীবন কারাভোগ করে মুক্তি পেয়েছেন মোজাম্মেল প্রধান।

হাবিব উল্লাহ ভূইয়া ও মানিক ভূইয়ার যাবৎজীবন কারাদণ্ড হলেও এখনো তারা পলাতক রয়েছে। তবে রাতের আধারে এখনো স্বজনদের সাথে দেখা করতে মাঝে মধ্যে বাড়ি আসে বলে জানা গেছে।

এ দিকে ৮ হত্যা পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য মাজেদার কান্না আজও থামেনি। প্রতি বছর এই দিনটি আসলে মনে পরে যায় নৃশংস সেই বর্বরোচিত ঘটনার কথা। এই মামলায় ছালামতের স্ত্রী ওয়াহেদুন্নেছা প্রাণ ভিক্ষা পাওয়ায় এবং যাবৎজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাবিব উল্লাহ ভূইয়া ও মানিক ভূইয়া এখনো পলাতক থাকায় হতাশ তিনি।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.