বৃহত্তর ময়মনসিংহের খান সাহেব

আরো বিশেষ প্রতিবেদন বিশেষ রচনা বলি ময়মনসিংহ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

হাফিজুর রহমান জামালপুর প্রতিনিধিঃ
খান সাহেব ; খান হলেন (নেতা) এবং সাহেব (মাস্টার) এটি ছিল সম্মান এবং সম্মানের একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি, যা মূলত মুসলিমদের দেওয়া হয় “খান সাহেব” উপাধিটি মূলত মুঘল সাম্রাজ্য দ্বারা মুসলিম প্রজাদের জনসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হত এবং একই উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যতে এটি গৃহীত হয়েছিল। খেতাবটি একটি খেতাব প্রতীক এবং একটি উদ্ধৃতি (বা সনদ )সহ দেওয়া হয়েছিল এবং প্রাপক তার নামের সাথে শিরোনামটি উপসর্গ করার অধিকারী ছিলেন। ভাইসরয় এবং ভারতের গভর্নর-জেনারেল কর্তৃক ব্রিটিশ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই উপাধিটি প্রদান করা হয়।

যিনি মোছাব খান নামেই নিজ এলাকায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সবার হৃদয়ের মনিকোঠায় চিরগৌরবের প্রতীক হয়ে আছেন। মহান এই বিদ্বান মানুষটির কৃতিত্ব ও গৌরবময় শিক্ষা ও বর্নাঢ্য কর্মময় জীবনের অনেক কিছুই আজ এই প্রজম্মের নিকট অজানা। পাক ভারত উপমহাদেশের নিখিল ভারতের রাজনীতির সাথে সম্পিক্ত এই মহান সিংহপুরুষ মানুষটির কর্মজীবনের নিঃস্বার্থ নানান মানব সেবার অবদান আজও অজানায় রয়েছে গেছে।

মহান মানুষটির জন্ম কোলকাতায়, শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি নিজের মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় যা এখন কোলকাতা মাদ্রাসা বোর্ড নামে বিদ্যমান। মরহুম মোসাহেব আলি খানের কোলকাতা সিটি কর্পোরেশনের উচ্চ পদস্থ চাকরি সূত্রে কোলকাতায় বেড়ে উঠা। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার প্রথম ডাবল এম.এ (স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত) । তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তে শিক্ষকতা করেছেন। কোলকাতা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র সি. আর. দাসের অনুরোধে লাইসেন্স অফিসার হিসেবে যোগদান করেন কোলকাতা সিটি কর্পোরেশন এ।নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস তখন ছিলেন Chief Executive Officer। থাকতেন বেকার হোস্টেলের নিকটবর্তী এক বাসায়। তিঁনি ময়মনসিংহ-৩ এর প্রতিনিধিত্বকারী পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তানের তৃতীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব বাংলার বহু শিক্ষার্থী, চাকরি প্রার্থী মানুষের আনাগোনায় ভরপুর থাকতো সেই বাসা। নিঃস্বার্থ পরোপকারী মানুষটি সবসময়ই সচেষ্ট থেকেছেন নিজ দেশের মানুষের কল্যাণে।

নিখিল ভারতের রাজনীতির সাথেও অনেকটা সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। সেই সূত্রে সখ্যতা গড়ে উঠে সুভাষ বসু, সি. আর.দাস, আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ, কে,ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী সহ অনেক বিশিষ্ট মানুষের সাথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবও ওনার স্নেহধন্য ছিলেন। আবু সাইদ চৌধুরীর বাবা এই মানুষটিকে তাঁর ছেলের অভিভাবকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন যার অভিভাবকত্বে পরবর্তীতে তিনি হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ চৌধুরী।

প্রচারবিমুখ এই মানুষটি কথায় কথায় জাহির করেননি নিজেকে। হয়েছেন এম.এন. এ, মিশেছেন দেশি, বিদেশি নেতৃবৃন্দের সাথে। নিজের এলাকায় গড়েছেন বিভিন্ন স্থাপনা কিন্তু কখনও তা নিজের নামে করেন নাই, নিজের নামের প্রচার করেননি। যার অন্তরে ছিল নিঃস্বার্থ মানব সেবা, সমাজ সেবা। দুনিয়া থেকে বিগত হয়েছেন ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর, শুয়ে আছেন, নিভৃতে, নিরালায়। নেই কোন স্মৃতিসৌধ। আছেন অনেক অনেক মানুষের মণিকোঠায়।

দেশ বিভাগের সময় কোলকাতায় ওনার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধ উপেক্ষা করে অনেকটা ছেলে মেয়েদের পীড়াপীড়িতে নিজ পরিবার সমেত ঢাকায় চলে আসেন চাকরি ছেড়ে। ঢাকার চামেলীবাগে ১৯৫০ এর দিকে। তখন এখানে তেমন ঘরবাড়ি ছিলনা। মোসাহেব আলী খান, তিনিই এই বাড়িটি কিনেছিলেন। তখন দালানটির নাম ছিল তপোবন, যা বর্তমানে এটি Dara’s paradise নামে পরিচিত।
স্ব-মহিমায় মহান এই মানুষটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তে জন্মভূমি ভাটারার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের মনিহার হয়ে গর্বের চির ভাস্কর হয়ে থাকবেন।
ওনার বেদেহী আত্মার প্ৰতি বিনম্ৰ শ্রদ্ধা ও অতল ভালোবাসা রইলো।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *