বৃদ্ধাশ্রমে এক ছাদের নিচে মসজিদ-মন্দির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সুধী সমাবেশে দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, এই উপমহাদেশে যতগুলি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে হয়েছে, সব রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। ধর্মীয় ব্যক্তিরা দাঙ্গাবাজ হয়না। ধর্ম ব্যবাসায়ীরা দাঙ্গা সৃষ্টি করে। ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবার জন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করেন। ধর্মীয় কারণে কোন সংঘাত সৃষ্টি হয়নি। এক ছাদের নিচে মসজিদ মন্দির বিনির্মাণ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
শনিবার (৭ অক্টোবর ২০২৩) বিকেলে বীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গোধূলী বৃদ্ধাশ্রমে ৩০ শতাংশ জমির উপর ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একই ছাদের নিচে মসজিদ-মন্দির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।“পৃথিবীটা মানুষের হোক, ধর্ম থাকুক অন্তরে, মসজিদে আজান হোক, ঘন্টা বাজুক মন্দিরে” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মনোরঞ্জন শীল গোপাল আরো বলেন, এদেশের মানুষ ধর্মীয়ভাবে একের অপরের পরিপূরক। ধর্মব্যবসায়ী লোকদের কারণে বারবার ধর্ম হলো কলুষিত হয়। আমরা এখানে কোন ভেদাভেদ সৃষ্টি করিনি। এই বৃদ্ধাশ্রমে মুসলিম-হিন্দু বৌদ্ধসহ সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। তারা যেন তাদের নিজ নিজ ধর্ম নিজেদের মত করে পালন করতে পারেন। সে কারনেই একই ছাদের নিচে মসজিদ-মন্দির নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলেন, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সেই আলোকেই আজকের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে উজ্জীবিত করতেই এই উদ্যোগ গ্রহণ। সামনা-সামনি, পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির থাকলেও বাংলাদেশে কোথাও একই ছাদের নিচে মসজিদ-মন্দির রয়েছে এটা আমার যানা নেই। তবে আমরা শুরু করলাম। এটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি বড় উদাহরণ।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোপালদেব শর্মার সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শাহিনুর ইসলাম, দিনাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী বিভাত্মানন্দ মহারাজ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. ডিসি রায়, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট দিনাজপুর অফিসের সহকারি পরিচালক আলহাজ্ব মশিউর রহমান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা আক্তার বৃস্টি, ওসি আব্দুর রাজ্জাক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আতাউর রহমান বাবু।
বৃদ্ধাশ্রমের বসবাসকারী জোতিন্দ্র নাথ রায় বলেন, আমরা বৃদ্ধ মানুষরা এখানে থাকি। দূরের মসজিদ-মন্দিরে যেতে পারি না। এখানে মসজিদ-মন্দির নির্মান হলে নিজেদের মত করে যে যার ধর্ম পালন করতে পারবো। এই মসজিদ মন্দির নির্মান শুরু হওয়ায় আমরা অত্যান্ত আনন্দিত।
মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার বয়স হয়েছে। জীবনে অনেক কিছুই দেখেছি, কিন্তু এক ছাদের নিচে মসজিদ মন্দির রয়েছে তা আমি দেখি নি। এই মসজিদ মন্দিরটি নির্মান হলে তা আমি দেখে যেতে পারবো। দূরে মসজিদে মন্দিরে যাওয়া বৃদ্ধদের জন্য খুবই কঠিন। এই মসজিদ মন্দির নির্মান হলে আমরা সহজেই গিয়ে যে যার মতো ধর্ম পালন করতে পারবো। আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করায় এমপি এবং চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি এই নির্মান কাজ শেষ হবে।
এসময় সুধী সমাবেশে আগতদের বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা ক্যাম্প পরিচালনা করেন ডা. ডিসি রায়।