ঢাকায় আটকে পড়া বিহারীদের ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিহারীদের কথা আমাদের মেয়র সাহেব বলেছেন। শুধু ঢাকা না, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আছে। অবশ্য তারা পাকিস্তানে যাবে বলে, পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান কোনোদিন তাদের গ্রহণ করেনি। তাদের নাম করে অনেক প্রতিষ্ঠান অনেক টাকা-পয়সা তুলেছে, কিন্তু তাদের আর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এখন তাদের ছেলে-মেয়ে হয়ে গেছে, নাতি-পুতি হয়ে গেছে; তাদের বংশ পরম্পরা বেড়েছে। কিন্তু তারা সেই জেনেভা ক্যাম্পের ছোট্ট জায়গায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করে।
তারা কিন্তু খুব কর্মঠ, বিভিন্ন কাজ তারা খুব দক্ষতার সঙ্গে করে। যে কারণে আমি তাদের জন্য ভালো একটা বাসস্থানে ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং তারা যে যে কাজে পারদর্শী, সে কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। সেটা হয়তো ঢাকার ভেতরে এতটুকু জায়গার মধ্যে হবে না। ভালো এলাকা, যেখানে ইন্ডস্ট্রি আছে, কাজ আছে, কাজ করার সুযোগ আছে—সেখানে তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তারা অন্তত মানুষের মতো বাঁচতে পারবে। মানুষকে মানুষ হিসেবেই আমরা দেখতে চাই। তারা হয়তো এখানে থাকতে চায়নি, কিন্তু তারা এখন যাবে কোথায়? আর তাদের পরের প্রজন্মগুলোতো এ দেশেই জন্মগ্রহণ করেছে। সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের করতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে যাতে এ দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক তার নাগরিক সুবিধাটা ভোগ করতে পারে। উন্নত জীবন পেতে পারে। এই ঢাকা শহর, এক সময় ছিল ছোট একটা শহর। চারিদিকে নদী বিধৌত ঢাকা। চমৎকার একটা ভৌগলিক পরিবেশ। একটা স্বাধীন দেশের রাজধানী হেসেবে এটার গুরুত্ব বেড়ে যায়, জনসংখ্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উন্নয়নে যে চিন্তা-ভাবনা সেটা ছিল একেবারে তৃণমূলের মানুষ থেকে তাদের জীবনমান উন্নত করা। অর্থাৎ ক্ষমতাটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূল থেকে যেন উন্নয়নটা আসে। দুর্ভাগ্য যে, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সেটা করা হয়নি। যার ফলে মানুষ ধীরে ধীরে রাজধানীমুখী হয়ে পড়ে কর্মসংস্থানের জন্য। যার জন্য চাপটা বেশি আসে। তা ছাড়া, একটা বিপ্লবের পরে একটা বিবর্তনও হয়। কিছু মানুষ খুব আর্থিক সচ্ছলতা পেয়ে যায়। কিছু মানুষ হয়তো একেবারে হারিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এ অঞ্চলে খুব একটা পরিকল্পিতভাবে এ শহরটা গড়ে উঠেনি। যত্রতত্র যে যেভাবে পেরেছে গড়ে তুলেছে। ফলে ধীরে ধীরে এত মানুষের চাপ যে মানুষের বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে যাচ্ছে। একটা সিটি করপোরেশন করা হলো, অথচ জনসংখ্যা এত বিশাল। একটা সিটি করপোরেশন দিয়ে এত মানুষের সেবা দেওয়া অসম্ভব বিষয় ছিল। এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটা কখনো সম্ভব হয় না। যে কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দুটো ভাগে ভাগ করা। বাকি যে জায়গাগুলো সেগুলোকেও আমরা সম্পৃক্ত করে ফেলবো। উত্তর এবং দক্ষিণে ইউনিয়নগুলো ওয়ার্ডে ভাগ করে সিটি করপোরেশনের সব সুবিধা যেন পায় সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রঃ ডেইলি স্টার