মোঃ শাকিল আহমেদ, বামনা ( বরগুনা) প্রতিনিধিঃ
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পথে। ক্লান্ত সূর্যটা হেলে পড়েছে একটু একটু পশ্চিমা দিগন্তে। সূর্যের মায়াবী রশ্মি যেন বিষখালীর জলে মিলেমিশে একাকার। জলে চোখ ফেরালে মনে হয় যেন আরেকটা সূর্য বিদায়ের দৃশ্য। নদীর বুকে খেলা করে জোয়ার – ভাটার স্রোত। ঠিক ওই মুহূর্তে জোয়ার থাকুক আর ভাটা থাকুক, সূর্যাস্তের চিকচিকে আলো নিবিড় সখ্য গড়ে তোলে ঢেউয়ের সাথে।
তখন শেষ বিকেল সূর্য পশ্চিমা আকাশে, আলোয় মেখে পৃথিবী যেন ক্লান্ত, অবসন্ন। অল্প অল্প হিমেল হাওয়ায় কাপছে নদীর জল। মধ্যহ্নর তীব্র তেজ বিলিয়ে দিয়ে বিকেলের সূর্য নিবিড় শান্ত প্রশান্তিতে। মনে হলো পৃথিবী যেন এখন একটু বিশ্রাম খুঁজছে। পাখিরা নীড়ে ফিরছে, তাদের ঢানায় সোনালী আলোর পরশ। চার দিকে কনে দেখা আলো। সেই আলোয় অপার বিস্ময়ে আমি দেখছি সৃষ্টির অপূর্ব রুপ। সারাদিনের দীপ্তি ছড়ানো প্রবল তেজী সূর্য বিদায় বেলায় লজ্জাবনত, কোমল। ভয়ঙ্কর সুন্দরের মাঝেও কোমলতা লুকিয়ে থাকে এ যেন তারই প্রতি রূপ।
এ সময় নদীর বুকে ভেসে বেড়ায় দু একটা পাল তোলা নৌকা। দেখা যায় দু’একটা ছোটো ছোটো ঠিঙ্গি নৌকায় বরশী দিয়ে মাছ শিকারীদের।
প্রবাদ আছে “আমরা মাছে ভাতে বাঙালি” তাই প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিরা কেউ সখের বসে আবার কেউবা বাণিজ্যিকভাবে পেশাগত কারণেও মাছ ধরাতে আনন্দ পায়। এই মাছ ধরতে খাল, বিল, নদ-নদী, মুক্ত জলাশয় এমনটি সাগরেও চলে যায় অনেকেই।
তবে সখের বসে মাছ ধরাতেই আনন্দ পায় অনেকে। তাই প্রচুর অর্থ খরচ করতেও কার্পণ্য করেনা। শেষ বিকেলে এই বরশী দিয়ে মাছ শিকার করাই যেন তাদের নিত্যদিনের ঘটনা।
এমন সময় দূরের মেঠো পথ দিয়ে চলছে গাড়ি, আর হাট থেকে ফিরছে হাটুরে। কিন্তু সবাই যেন চুপচাপ, বাড়ি ফেরার তারা। লজ্জাবতি রুপতমারা কলশী ভরে জল নিয়ে ফিরছে ঘড়ে, নুপুরের ঝুনঝুন শব্দে। সাদা সাদা বক গুলো ঢানা মেলে দল বেধে ফিরছে নীড়ে, ছোট্ট ছানাদের জন্য আহার সংগ্রহ করে।
সূর্য অস্ত যায় যায়। যাবার আগে সূর্য যেন শেষ বারের মতো পৃথিবীর বুকে পাঠিয়ে দিচ্ছে রক্তিম রশ্মি।
দুরের গাছপালা গুলোর মধ্যে ঝির ঝির করে বইছে শেষ বিকেলের মৃদুল হাওয়া। শেষ বিকেলের আলোর রুপছটা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম, এত সুন্দর এত অপূর্ব।
পৃথিবীর রঙ এখন ধূসর” সূর্য যেন কিছুটা ম্লান।। আর একটু পরেই জলের ভিতর টুপ করে ডুবে যাবে সূর্য। এমনই সময় কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন
সন্ধ্যা হয়ে আসে,
সোনা মিশেল ধূসর আলো ঘিরলো চারিপাশে।
নৌকাখানা বাঁধা আমার মধ্যিখানের গাঙ্গে।
অস্তরবির কাছে নয়ন কী যেন রঙ মাঙ্গে।
সূর্য এখন পরিপূর্ণ রক্তিম চাঁদ বলে ভ্রম হয়। পাখিদের কলকাকলি থেমে গেছে। অসীম আকাশের সিমানায় যে যার নীড়ের খোঁজে উরে বেড়াচ্ছে। তাদের ঢানায় ঠিকরে পড়ছে ডুবন্ত সূর্যের সোনালী ছটা।
নদীর জলে রক্তিম সূর্যের প্রতিবিম্ব একেঁবেঁকে চলে গিয়েছে অনেক দূরে। চেনা পৃথিবীটা মনে হচ্ছে অনেক বেশি অচেনা। মনে হলো আজ এই প্রথম বুঝি পৃথিবীর বুকে সূর্যাস্তের ক্ষণটি এল। আলোর সঙ্গে আকাশ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে এক সময় নদীর জলে হারিয়ে গেল সূর্যটা। নেমে এলো সন্ধ্যা। পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিল কোলাহল মুখর একটি দিন।