মোঃ রেদওয়ানুর হক শুভ, ববি প্রতিনিধিঃ ১৯ জুন, বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস পালন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর ১৯ জুন বিশ্ব বাবা দিবস।
বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তারপরও বাবার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটির প্রচলন।
পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। এবারের বিশ্ব বাবা দিবস নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন শিক্ষার্থীর মতামত তুলে ধরা হলো।
আমিনা আক্তার তৌসী—
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৯-২০)
‘বাবা’ শব্দটি যতটা ছোট এই সম্পর্কের দায়িত্ব আর ভালোবাসা তার থেকে হাজার গুনে বড়। সব মানুষের জীবনে বাবার ভূমিকা অপরিসীম । গাছ যেমন তার ফল-ফুল-ছায়া দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের উপকার করে যায় , ঠিক তেমনি বাবা নিঃশব্দে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের ওপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যায়। তারা খুব বেশি কথা বলে না, কোন অভিযোগ করে না , শুধু ভালোবাসা আর দায়িত্ব দিয়ে আমাদের পরম যত্নে তাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আগলে রাখে।
বাবা ছাড়া আমাদের জীবন সত্যিকার অর্থেই অসহায়। কারণ তাদের শাসন ছাড়া অনেকেই নিজেকে ভেঙে প্রবল স্রোতে ভাসিয়ে নিঃশেষ করে দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি এই নিঃস্বার্থ মানুষটির অনেক সময় শেষ ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। সন্তানকে সারা জীবন যেভাবে বাবা বুকে আগলে রাখে ; ঠিক তেমনি বাবার বৃদ্ধ বয়সে সন্তান বাবাকে পরম যত্নে আগলে রাখুক। তাহলেই সার্থক হবে ভালোবাসা।
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব—
এনিম্যাল সায়েন্স এ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৭-১৮)
স্বার্থের এই পৃথিবীতে যে মানুষটি আপনাকে স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে তিনি হচ্ছেন ‘বাবা’! আমাদের জন্মের পর আমরা ‘মা’ কে প্রথম ‘মা’ বলে ডাকি ঠিকই তবে আমাদের খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার জন্য, জীবনকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার জন্য যে মানুষটির অবদান সবচেয়ে বেশি তিনিই হচ্ছে বাবা।
‘বাবা’ নামক শব্দটিকে বৃক্ষের সাথে তুলনা করা চলে, বৃক্ষ যেমন তার ফলফলাদি, ছায়া, ডালপালা দিয়ে অন্যের উপকার করে অথচ নিজের জন্য কিছুই রাখেনা বাবারাও ঠিক তেমনি। সন্তানের সুখের জন্য, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবারা অনায়াসে নিজের জীবনকে বাজি রাখতে পারে। বাবারা যেমন সন্তানদের আদর করে তেমনি শাসনও করতে পারে, কোনো পরিবারের অগ্রগতির মূল কারিগরই হচ্ছে বাবা। বাবার থেকেই আমরা ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক শিক্ষা, শিষ্টাচার, আদবকায়দা শিখে থাকি যেগুলো পরবর্তীকালে আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
সন্তানের জন্য এতো এতো অবদান রাখার পরেও কতক সন্তান নিজের পিতাকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়, বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, তাদেরকে অপমান কিংবা মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়, যেগুলো একদমই অমানবিক ও নিকৃষ্টতম কাজ।
আজকের এই বাবা দিবস উপলক্ষে, প্রত্যেক সন্তানের উচিত তাদের পিতাকে যথাযথ সম্মান করা ও তাদের দেখভালের বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা, বেঁচে থাকুক বাবাদের অবদান।
অন্তরা আক্তার—
মার্কেটিং বিভাগ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (২০২০-২১)
বাবা মানে শুধু একটি সম্পর্ক নয়। স্রেফ একটি সম্পর্কের নাম নয়। বাবার মাঝে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ। অনুশাসনের ২য় নাম কেবল মাত্র বাবা। বাবা মানেই তো ভালোবাসি আজন্ম তাই তো পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত হাতের অধিকারী বাবা ছাড়া আর কেউ না। বাবা মানেই সবচেয়ে বড় বৃক্ষ। যতই দুঃখ আসুক না কেন দুঃখের ছায়া কখনোই বাচ্চাদের উপর পরতে দেয় না বাবা। বাবা হলো সেই শতবর্ষী বটবৃক্ষ যার প্রতিটি শাখা আকড়ে ধরে আমাদের পথ চলা। বাবা হলো সেই অসীম মহা সাগর। যার সীমানা অতিক্রম করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। একি সাথে বাবা একজন নিখুত অভিনেতাও বটে।
যতই কষ্ট হোক, সন্তানের সুখের জন্য কষ্ট গুলো বুকে চেপে হাসিমুখে নিঃস্বার্থভাবে পূরণ করেন সন্তানের আবদার।বাবাদের সবচেয়ে বড় গুন হলো পকেট খালি থাকলেও সন্তানকে হতাশ করেন না কখনো। পৃথিবী বদলে গেলেও বাবার ভালোবাসা কোনোদিনও বদলায় না। তাইতো বাবা হলো বিধাতার দেওয়া প্রকান্ড আশীর্বাদের প্রতিচ্ছবি।
একজন বাবা তার সন্তানের নেপথ্যে কতটা অবদান রেখে যান তার চুল চেড়া হিসাব কেউ কখনো দেখাতে পারবে না। কারণ বাবারা আজীবন সন্তানদের জন্য বেহিসাবি। বাবা মানেই উপর থেকে ভীষণ রাগী আবরণে মোড়ানো মিষ্টি ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। মহাবিশ্বের সবাই যদি স্বার্থপর হয় একজন বাবার অভিধানে তার সন্তানের জন্য স্বার্থপর শব্দটি নেই বললেই চলে। এত ঋণ… শোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আসলে বাবাদের কাদ টা অন্য সকলের চেয়ে অনেকটা চওড়া, তাদের হৃদয়টা আকাশের মত বিশাল আর মন ভর্তি সমুদ্রের মত ভালোবাসা। তাইতো জগৎ সংসারে সমস্ত দায়ভার তারা অনায়াসে বয়ে চলেন। বাবারা তাদের স্বপ্নকে লালন করে চলে সন্তানদের মাঝে। সকল সন্তানের দায়িত্ব বাবাদের স্বপ্ন পূরন করা। এমনকি বাবারা যত খানি ভালোবাসেন সেই ভালোবাসা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেওয়া।
আজকের বিশেষ দিনে সকল বাবাদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ভালো থাকুক সকল বাবারা। প্রতিটি দিন হয়ে ওঠোক বাবা দিবস।
মোসা:লতিফা হেলেন মমো—
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়(২০১৯-২০)
অর্থহীন এই পৃথিবীতে বাবা হলো একজন মানুষের অস্তিত্বের প্রথম পরিচয়। আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পেছনে যার অবদান সবথেকে বেশি তিনি হলেন বাবা। ত্যাগ এর সংজ্ঞা শুধুমাত্র একজন বাবা’ ই বলতে পারবেন।
আজ ১৯ জুন।বিশ্ব বাবা দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের প্রায় ৭৪ টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। বাবা হলো বট গাছের ছায়ার মত, যে ছায়া তলে থেকে সন্তানের সারাজীবন অনায়াসে কেটে যায়। তবে আমার মাথার উপর থেকে সেই ছায়া চলে যায় অনেক ছোট্ট বেলায়। বাবা যাওয়ার সাথে সাথেই সব বায়না শেষ হয়ে যায়, তাই আমার কাছে “বাবা দিবস” বলে আলাদা কিছুই নেই।
মাইকেল রান্তাডিপাক বলেছেন, “পৃথিবীতে একটি মেয়েকে তার বাবার চেয়ে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারবে না”। “বাবা” , আমিও অনেক ভালোবাসি তোমায়!! কখনও বলার সুযোগ হয় নাই, আর কখনও বলতেও পারবো না।বাবা যেখানেই থাকুক, বাবার ছায়া অদৃশ্য হয়ে মাথার উপর আছে সব সময় ।
বাবা কে প্রতিদিন অনেক বেশি পরিমাণে ফিল করি,বাবার শূন্যতা যেন কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। বাবা দিবসে সকল বাবার প্রতি রইলো শুভকামনা ও শ্রদ্ধা। বিশ্বের সকল বাবা ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক এটাই প্রত্যাশা।