বিশ্বে মানবাধিকার সংকট ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস

আরো চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিবেদন বিশেষ রচনা বলি সারাদেশ
শেয়ার করুন...

এম.এম কামাল
মানবাধিকার দিবস ও বিশ্বের জন্য এখন একটি সংকটকাল। আজকের পৃথিবীতে মানবাধিকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত কোথাও নির্ভেজাল মানবাধিকার খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস উদযাপিত হয়। বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে করে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবস পালিত হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক মানবাধিকার সংগঠন দিবসটি পালন করে থাকে। জাতীয় স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব বহন করে দিবস সম্পর্কে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। দিবসের গুরুত্ব সমস্যা সম্ভাবনা এবং মানবাধিকারের বাস্তবায়ন দাবি করে সভা সমাবেশ, র‌্যালি সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
মানবাধিকার দিবসের তাৎপর্য বলে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীর যত আয়ু বাড়ছে, ততই দুনিয়াব্যাপী নানা দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার বাস্তবায়ন ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।
মানুষের অধিকার পরিবার ও সমাজের প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। একজন মানুষের জিবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যেই নাগরিক অধিকার পাওয়ার কথা ছিল, সেটি সমাজ ও রাষ্ট্র এখনও অনেক দেশ ও অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়ন হয়নি। দুনিয়ার নানা দেশে অসংখ্য মানবজাতি গোত্র তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত। বঞ্চিত আবার মানুষগুলো তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে তাদের দাবি-দাওয়া অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সোচ্চার। বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মানবাধিকার হারা মানুষ নানাভাবে প্রতিবাদ করছে। দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, চলমান রয়েছে, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের অগ্রগতিও রয়েছে, মানুষ নানাভাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং মুক্তির জন্য তাদের সর্বশক্তি দিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। এক শ্রেণির পুঁজিবাদী গোষ্ঠী নিরীহ শান্তিকামী মজলুম মানুষের ওপর অর্থনৈতিক জুলুম চালাচ্ছে। দেশের জনগণ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছে না। অন্নবস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিরীহ জনগণ আরো বেশি প্রত্যাশা করছে। মানুষ সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ প্রাণী জীবন ও মৃত্যু মানুষের জীবনসঙ্গী। মানুষকে তার কর্মের সমস্ত হিসাব-নিকাশ দেয়ার একটি সিস্টেম আছে। অন্য পশুর মতো যেনতেনভাবে মানুষ জীবন পরিচালনা করতে পারে না। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত, রাষ্ট্র থেকে অপর রাষ্ট্র সব জায়গাতেই ক্ষমতাসীনদের জবাববিহীন সম্মুখীন হতে হবে। দুনিয়ায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেনতেনভাবে পরিচালনা করলে ও পরকালে অক্ষরে অক্ষরে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। যেহেতু মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সংঘবদ্ধ জীবনযাপন করতে শিখেছে, সেহেতু মানুষের দলনেতা সমাজনেতা একটি রাষ্ট্র থাকবে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় সরকার কাঠামো, রাষ্ট্র গঠন হবে। সে রাষ্ট্র সরকার জনগণের হয়ে তাদের সমস্ত মানবিক নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করবে।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান আছে। সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারের বিবরণ রয়েছে। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত সরকারের কর্তব্য। বিশ্বব্যাপী আজকের এই সময়ে কোথাও না কোথাও মানবজাতি তার নাগরিক ও মৌলিক রাষ্ট্রীয় অধিকারের জন্য যুদ্ধ সংগ্রাম আত্মাহুতি দিচ্ছে। কোথায় মানবাধিকার যারা মানবাধিকার দিবস ও মানুষের নাগরিক অধিকার নিয়ে দেশ হতে দেশান্তর পর্যন্ত ফেরি করে বেড়ায় তারা নিজেদের মধ্যে প্রকৃত মানবাধিকার বাস্তবায়ন করতে দেখছি না। গোটা দুনিয়ার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ আজ জালিম শোষক অস্ত্রবাজ শক্তির হাতে জিম্মি। এই সময়ে মানবাধিকার নিয়ে বলা লেখা ও প্রতিবাদ ইত্যাদি একটি গতানুগতিক বিষয়ে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। প্রকৃত পক্ষে নিরিহ জনগণের অধিকার নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যাদের কথা বলার শক্তি কাজ করার সামর্থ্য আছে তারা কিন্তু জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ধারেকাছেও নেই। তবুও শান্তিপ্রিয় জনগণ মজলুম মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে চিৎকার আওয়াজ অব্যাহত রাখবে। মানবাধিকার মানবকল্যাণ এবং শান্তিময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব নেতাদের একযুগে কাজ করার মাধ্যমে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপন সফল হোক।
এম.এম কামাল।
সভাপতি জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি চাঁদপুর জেলা।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *