সুজন মাহমুদ, রাজীবপুর থেকেঃ
জামালপুর-ধানুয়া-কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা জলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ কুড়িগ্রাম অংশ ২৯ কিলামিটার সড়ক উনয়ন কাজ ধীরগতি ও ঠিকাদারর চরম গাফিলতির অভিযাগ উঠে এসেছে। ২০২০ সালর ডিসম্বর মাস কাজ শেষ করার কথা থাকলও ঠিকাদার বার বার সময় নিয় কালক্ষেপন করছন। এদিকে সড়কের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে জনসাধারণ চরম দুর্ভাগর মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। ধীরগতি কাজ নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযাগ করেছেন এলাকাবাসি।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতায় রাজীবপুরর ধুলাউড়ি থেকে রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা সালুর মাড় পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিমি সড়ক যার প্রসস্ত ৩০ ফুট উনয়ন প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকজ দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক উনয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে। কাজের শুরু থেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি, অনিয়ম, নিম্নমানের পাথর, বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করে পুকুর চুরির মতো ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এক্ষেত্রে সওজ’র দায়িত্ব থাকা প্রকৌশলীর রহস্যজনক নিরব ভূমিকায় এলাকার জনসাধারণের মাঝ তীব্র ক্ষোপের সষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার রৌমারী-জামালপুর মহাসড়ক প্রসস্তকরণ ও মজবুতিকরণের মাধ্যম টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক অবকাঠামা এবং সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ ঐ মহাসড়ক উনয়ন কাজের উদ্যােগ নেয়। ২৯ কিমি মহাসড়ক উনয়ন তিনটি প্যাকজের মধ্যে রাজীবপুরের সীমানা থেকে রৌমারীর চাকতাবাড়ি পর্যন্ত ১০ কিলামিটারের চুক্তিমূল্য প্রায় ৪৮ কাটি টাকা এবং চাকতবাড়ি থেকে বাউসমারী পর্যন্ত ১০ কিলামিটার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। এই দুই প্যাকেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো মীর হাবিবুল আলম কনস্ট্রাকশন নামের একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অপর প্যাকজ বাউসমারী থেকে দাঁতভাঙ্গা সালুর মাড় পর্যন্ত ৯ কিলামিটার সড়ক উনয়ন ৪৫ কাটি টাকা ব্যায় কাজর দায়িত্ব পায় মেসার্স পুরোবী ট্রেডার্স এন্ড রানা বিল্টার্স প্রাইভট লিমিটড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্যাকেজের কাজ শেষ পর্যায়ে।
পীর হাবিবুল আলম কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানর দায়িত্ব থাকা ২০ কিলামিটার সড়ক উনয়ন কাজ শেষ করার কথা ছিল গেল এপ্রিল মাসে। কিন্তু তা শেষ করা হয়নি। আবারও সময় বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। বর্তমান কাজ বন্ধ রয়েছে। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানর বিরুদ্ধ নিম্নমানের কাজ এবং চরম গাফিলতি আর ধীরগতিতে কাজ করার অভিযাগ সবচেয়ে বেশি। সড়ক প্রশস্তকরণ নিম্নমানের খোয়া ও পাথর মাটির মতো বালুর সঙ্গে মিশ্রণ করে ফালানো হচ্ছে। পুরনো কার্পটিং তুলে তা ভালোভাবে গুড়ো করা হচ্ছে না। কার্পটিংএ নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। বন্যায় সড়ক যাতে ধসে না যায় সে জন্য সড়কের দু’পাশে ৬ হাজার ২৫৭ মিটার আরসিসি টা-ওয়াল (আরসিসি পিলার করে ঢালাই ওয়াল) নির্মাণে নিম্নমানের পাথর ও বালু এবং সিমেন্টের পরিমাণ কম ব্যবহার করা হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ন ঐ সড়ক উনয়ন কাজের টেকসই নিয় শঙ্কা তৈরী হয়েছে জনমনে।
সরজমিন সড়ক ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে ওইসব তথ্য। ফরজ আলী নামের এক বাস চালক বলন, ‘রাস্তার কাজ করা হচ্ছে মাটির মতো বালু। পাথরের খোয়া দেখাই যায় না। এভাবে কাজ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কের বারোটা বাজবে।’ সালমান মিয়া নামের এক ট্রাক চালক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যেবা কইরা কাজ করতেছে তাতে দুই মাসও টিকবো না, সড়কজুড়ে গর্তের সৃষ্টি হবো। হুনছি এ সড়ক ভালা করার জন্য সরকার মেলা ট্যাহা বরাদ্দ দিছে। ঠিকাদারের কাছ থিকা ইঞ্জিনিয়াররা ঘুষ খায়। কাক কি কমু, দ্যাশটা ঘুষ দুর্নীতিতে ভইরা গ্যাছে।’
রৌমারী উপজলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, সড়কের নিম্নমানের কাজ নিয় আমাকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি দলের নতাকর্মীরা ফোন দিচ্ছেন। তারা বলছে, ‘স্যার সড়কটি আমাদের যেভাবে নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে তাতে ক্ষতি ও ভোগান্তি হবে আমাদেরই। আপনি একটু সওজ’র কর্তপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন যাতে সড়ক উনয়ন কাজটি একটু ভালো ভাবে করে।’
এ ব্যাপার সড়ক উনয়ন কাজ তদারকির দায়িত্ব থাকা সওজ’র উপসহকারি প্রকশলী ফয়সাল আহমদের কাছ জানতে চাইল তিনি বলন, ‘আমাকে বলে কোনো লাভ নেই। স্যারের (নির্বাহী প্রকশলী) সঙ্গে কথা বলেন।’ নির্বাহী প্রকশলী আলী নুর আইন বলেন, ‘ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করলে ধরা খাবে। আমাদর সাইটিফিক দল সরজমিনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। তারপর ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে।’ ধীরগতি আর বার বার সময় বাড়ানো প্রসঙ্গ তিনি বলন, আমরা ওই ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগাদাপত্র দিয়ে সর্তক করছি। কিন্তু তিনি মন্ত্রণালয় থেকে সময় বাড়ানোর কাগজ এনে আমাদের দেয়। তখন আমরা কিছু করতে পারি না।