বাংলাদেশে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের কারণ কী, যা বলছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা

আবহাওয়া আরো পরিবেশ সারাদেশ
শেয়ার করুন...

সম্প্রতি বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র ক্ষত না শুকাতেই বঙ্গোপসাগরে আসছে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ‘মিগজাউম’ নামে ঘূর্ণিঝড়টি দেশের বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এ বছরই দেশের উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ ও ‘হামুন’। আর ‘মিগজাউম’ আঘাত হানলে রেকর্ড ঘূর্ণিঝড়ের দেখা পাবে বাংলাদেশ।

বারবার ঘূর্ণিঝড়ের হানা ভাবিয়ে তুলছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের। একই সময়ে এত বেশি ঝড়ের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন তারা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে, যা আগামী বুধবার (২৯ নভেম্বর) নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আঘাত হানবে কিনা, তা ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি দেখে জানা যাবে।

আবহাওয়াবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে চলেছে ‘মিগজাউম’ ঘূর্ণিঝড়টি। যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের উপকূলে। এটি হবে ২০২৩ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া চতুর্থ ঘূর্ণিঝড়।

জানা গেছে আগামী সোমবার থাইল্যান্ড উপসাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করবে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত। যা ক্রমেই উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে। শক্তি বাড়িয়ে তা বুধবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন হয় -এমন প্রশ্নের উত্তরে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি কোনো লঘুচাপ কিংবা নিম্নচাপ পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কিনা তা আবহাওয়া সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন ভারতীয় উপমহাদেশে জেট স্টিমের গতিপথ ও আবহাওয়ার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশেষ করে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ুপ্রবাহের দিক ও মান, বায়ুচাপ, বায়ু শিয়ার, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পানির তাপমাত্রা, সমুদ্রে জমা হয়ে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় তাপীয় শক্তির পরিমাণ।

তিনি বলেন, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি ও এর থেকে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ৩০ বছর ধরে ঘূর্ণিঝড়ের চলার গতি কমে যাচ্ছে। ধীরগতির কারণে ঘূর্ণিঝড় তার চলার পথে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময় পাচ্ছে বেশি। এ দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এল নিনোর সঙ্গে উষ্ণায়ন ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। ফলে আমাদের দেশে এবার ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক জানান, ১৮৯১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৬২০টি ঘূর্ণিঝড় ও অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। আর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে ৯৪১টি। এর মধ্যে অক্টোবরে হয়েছে ২৫৫, নভেম্বরে ২১৯ ও ডিসেম্বরে ১০৫টি। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে অক্টোবরে ৪২, নভেম্বরে ৭৪ ও ডিসেম্বরে ২৮টি হয়েছে। ১৮৯১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অক্টোবরে সাগরে এ পর্যন্ত নিম্নচাপ হয়েছে ১২৯, নভেম্বরে ৭১ ও ডিসেম্বরে ৪৫টি।

এবার এক বছরে তিনটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। যাকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন না, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি এবং বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এর আগে ২০২১ সালে এক বছরে তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। এবার তিনটি ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে। এটি স্বাভাবিক নয়, ৫০ বছরে এমনটা হয়নি।

সূত্র: সমকাল

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.