অনলাইন ডেস্কঃ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে পাকিস্তানের পক্ষে থাকা সেই চীন এখন বাংলাদেশের অত্যন্ত কাছের বন্ধু। সম্প্রতি বাংলাদেশের হাতে নেয়া বড় বড় প্রকল্পে চীনের অর্থায়নই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। নিউজনেক্সট বিডি
আর্থিক সহযোগিতার দিক থেকে চীনের অবস্থান জাপানের পরই। বিষয়টা অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী। এছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের নজর রয়েছে সর্বদা। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে আসার পরেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা পায়। এরই অংশ হিসেবে ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে চীন। অবকাঠামোগত প্রকল্পে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা হিসেবে ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মকা-ে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটি। অন্যদিকে ঋণচুক্তি হিসেবে দেয়া হয় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এরপর দুই দেশের মাঝে দীর্ঘকালীন একটা দূরত্ব সৃষ্টি হলেও সম্প্রতি বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হলে সাড়া দেয় চীন। এর অংশ হিসেবে জুলাইয়ের দ্বিপাক্ষিক শুল্কমুক্ত চুক্তির আওতায় দেশটিতে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্য বিনা শুল্কে রপ্তানি করতে পারছে বাংলাদেশ। এদিকে ন্যূনতম দেশগুলোকে বাণিজ্যক সুবিধা পাওয়ার জন্য কিছু নীতিমালা বেঁধে দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। তবে এ নীতিমালার আওতার বাইরে গিয়ে অনেক দেশ এ ধরনের সুবিধা পেতে লড়াই করে যাচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মত স্বল্পোন্নত দেশগুলো।
বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ঘাটতিতে থাকা বাংলাদেশ কখনও মধ্যম আয়ে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারেনি। ফলে বিকল্প উপায় না থাকায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই এই প্রচেষ্টা আমাদের ধরে রাখা উচিত। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এরইমধ্যে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেই চলেছে।
এদিকে বাংলাদেশের শুল্ক পণ্যের ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে চীন সরকার। যা ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। পাঁচ হাজার ১৬১ বাংলাদেশি পণ্য এ শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় রয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে চীন থেকে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় তিন হাজার ৯৫ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে থাকে। সেই সুবিধার বাইরে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হলো। ফলে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় বাংলাদেশকে চীনের পক্ষ থেকে আট হাজার ২৫৬ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশ ভুটান। অন্যদিকে চীন স্বীকৃতি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মম হত্যার পর ১৯৭৫ সালে। সেইদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের উচিত ভুটানকে বিভিন্ন সহযোগিতা করা। এটা তাদের দায়িত্ব। যখন ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণ হবে, তখনই অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা দেখা দিবে। এছাড়া ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশ ও ভুটানের সড়ক যোগাযোগ আরো উন্নত করা দরকার।