মোঃ হুমায়ুন কবির মানিক, কুমিল্লা প্রতিনিধি।
কুমিল্লার বরুড়ায় প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখী টিভির সাংবাদিক অজিত সরকারের পরিবার। গত ২৫ জুলাই (রবিবার) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বড় হরিপুর গ্রামে ওই পরিবারের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অজিত সরকারের বড় ভাই ভুক্তভোগী সনজিত চন্দ্র দাশের স্ত্রী মিতা রানী সরকার বাদী হয়ে মৃত. শ্রীদাম চন্দ্রের ছেলে সুমন চন্দ্র দাশ (৩০), ভজন চন্দ্র্র দাশ (২৭) ও বিকাশ চন্দ্র দাশকে (২২) অভিযুক্ত করে বরুড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বড় হরিপুর (হিন্দুপাড়া) গ্রামের মন্টু চন্দ্র দাশ ও তার সন্তানদের সাথে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে মন্টু চন্দ্র দাশের ভাই প্রয়াত শ্রীদাম চন্দ্রের ছেলেদেও বিরোধ চলে আসছে। জীবিত থাকাকালীন শ্রীদাম চন্দ্র তার স্ত্রীকে পৈত্রিক সম্পত্তির ৯ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দেন। এছাড়া, শ্রীদাম চন্দ্রের মৃত্যুর পর তার ছেলেরা মন্টু চন্দ্র দাশের প্রায় অর্ধেক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে নেয়। তারা কৌশলে মন্টু চন্দ্র দাশের পৈত্রিক সম্পত্তির সকল দলিলাদি নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নিজ পিতা শ্রীদাম চন্দ্র দাশের নামে মন্টু চন্দ্র দাশের সম্পত্তির দেড় শতক সম্পত্তি গোপনে খারিজ করে নেয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় একাধিকবার মন্টু চন্দ্র দাশের পরিবারকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেয় প্রয়াত শ্রীদাম চন্দ্রের ছেলেরা। মন্টু চন্দ্র দাশের দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে বাড়িতে থাকে আর অন্য ছেলে চাকরিসূত্রে ঢাকায় থাকে।
পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে শ্রীদাম চন্দ্রের ছেলেরা গত (২৫ জুলাই) রবিবার দুপুর ১২টার দিকে লোকবল নিয়ে মন্টু চন্দ্র দাশের বাড়ির সীমানা দখল করতে গেলে তার ছেলে সনজিত চন্দ্র দাশ বাধা দেয়। এসময় দা, চাপাতি, হাতুড়ে, ছেনি, কিরিচ সহ দেশিয় অস্ত্র দিয়ে সনজিত চন্দ্র দাশের উপর হামলা চালায় শ্রীদাম চন্দ্রের ছেলেরা। প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সনজিত চন্দ্র দাশ গুরুতর আহত হলে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কয়েকদিন চিকিৎসার পর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তার বাম পায়ের হাটুর নিচে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়। পায়ের দুটো রগ কেটে যায়। মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
এ বিষয়ে সনজিত চন্দ্র দাশের স্ত্রী মিতা রানী সরকার বাদী হয়ে মৃত. শ্রীদাম চন্দ্রের ছেলে সুমন চন্দ্র দাশ (১ নং আসামি), ভজন চন্দ্র দাস (২ নং আসামি) ও বিকাশ চন্দ্র দাসকে (৩ নং আসামি) অভিযুক্ত করে বরুড়া থানায় ৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০ মামলা দায়ের করেন।
বরুড়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক অশোক শীল বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ভজন চন্দ্র দাশ নামে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি।’
বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন। তার মধ্য থেকে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে গ্রেফতারকৃত ভজন চন্দ্র দাশ (২ নং আসামি) জামিনে বের হয়ে এসে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। তারা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে অবিলম্বে বাকি আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।