মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শেরপুরে আমন মৌসুমের শুরুতেই সার নিয়ে কারসাজি চলছে। স্থানীয় ডিলার ও ব্যবসায়ীরা সারের কৃত্রিম সংকট ও দাম বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে আগে বরাদ্দ পাওয়া ৮শ’ টাকার ইউরিয়া সার বিক্রি করছেন ১১শ’ টাকায়। কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন প্রতিবস্তায় ৩শ’ টাকা বেশি দিয়েই সার কিনতে বাধ্য হচ্ছি ও হচ্ছেন কৃষকরা। অথচ সেই দিকে নজর নেই স্থানীয় কৃষি বিভাগের। তাদের তদারকি না থাকায় ডিলারদের নামে বরাদ্দের ইউরিয়া সার উত্তোলন করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এমনকি তাদের কাছে কমিশনের ভিত্তিতে লাইসেন্সও ভাড়া দিয়েছেন কোনো কোনো ডিলার। ফলে ডিলার-ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটই কৃষকদের পকেট কেটে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস জানায়, কৃষিনির্ভর এই উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বুধবার (০৫ আগস্ট) পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা লাগানো হয়েছে। আর ওই জমিতে চারা লাগানোর উপযোগী করতে প্রয়োজন এক হাজার মেট্রিকটন সার। সে অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগও করেছেন কৃষকরা। কিন্তু কৃষি অফিসের খাতায় দেখা গেলো উল্টো চিত্র। আগস্টের প্রথমদিন পর্যন্ত এই উপজেলায় সার বরাদ্দ ও উত্তোলন হয়েছে মাত্র ৪শ’ ৫৮ মেট্রিকটন ইউরিয়া। তাহলে চাহিদার বাকি সার কৃষক কী-ভাবে সংগ্রহ করলেন এমন প্রশ্নের কোনো সদত্তোর পাওয়া যায়নি। তবে জুলাই মাসের অবিক্রিত সার ও চলতি আগস্ট মাসের বরাদ্দের ইউরিয়া সার উত্তোলন করা হলেই কেবল সব ঘাটতি পুরণ হয়ে যাবে বলে সূত্রটি দাবি করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত সারের ডিলার রয়েছেন ১২ জন। আর বিআরডিসির ডিলার রয়েছেন ২১ জন। এছাড়া শতাধিক খুচরা সার ব্যবসায়ী রয়েছেন। সারের দাম বাড়ার আভাস পেয়েই কতিপয় ডিলার ও ব্যবসায়ী তাদের গুদামে ইউরিয়া সারের মজুদ গড়েন। সেইসঙ্গে বাজারে সার সংকটের গুজব ছড়িয়ে এবং সরকার কর্তৃক দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন তারা।গাড়ীদহ ইউনিয়নের দশমাইল এলাকায় সাথী এন্টারপ্রাইজের নামে বিসিআইসির একটি সারের ডিলার রয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধিকারী শাহজাহান আলী এখন আর নিজে ব্যবসা করেন না। তাই বিগত কয়েকবছর ধরে তার লাইসেন্সটি ভাড়া দিয়েছেন। তার ভাগ্নে মোতালেব হোসেন মাষ্টার নামের এক ব্যক্তি সেটি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে লাইসেন্সের দেওয়া শর্ত ভেঙ্গে নির্দিষ্ট স্থানের (গাড়ীদহ বাজার) পরিবর্তে উপজেলার সীমান্তবর্তী জামুন্না বাজারে বিক্রয়কেন্দ্র খুলে বসেছেন ওই ব্যবসায়ী। এরপর থেকে নিয়মিত ওই লাইসেন্সে সরকারি বরাদ্দের ইউরিয়া সার উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। কিন্তু জুন-জুলাইয়ে বরাদ্দের অবিক্রিত ইউরিয়া সার প্রতি বস্তায় ৩শ’ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করছেন তিনি। বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বেশি দামে সার বিক্রি করলেও ক্যাশ মেমোতে লেখা হচ্ছে পূর্বের মূল্য ৮শ’ টাকা। এই চিত্র শুধু তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই নয়। গোটা উপজেলা জুড়েই চলছে এই সার বাণিজ্য। সিংহভাগ ব্যবসায়ী বাড়তি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে শাহজাহান আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে সাব-ডিলার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোতালেব হোসেন মাষ্টার বলেন, বেশি দামে সার বিক্রির প্রশ্নই আসে না। সরকার নির্ধারিত নিয়ম মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এছাড়া কোনো অসঙ্গতি থাকলে কৃষি বিভাগ দেখবে, সেটি আপনাদের (সাংবাদিকদের) দেখার দায়িত্ব না বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আগের বরাদ্দের সার বাড়তি দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। কোনো ডিলার-ব্যবসায়ী এ ধরণের কাজ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে যেন বেশি দাম নিয়ে সার বিক্রি করতে না পারে এজন্য প্রত্যেক ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্র উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন এই কষি কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরণের কোনো বিষয় জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।