বগুড়া শেরপুরে দীর্ঘ ১৮ বছরেও বিচার হয়নি সাংবাদিক দিপংকর চক্রবর্তী হত্যার

আইন-অপরাধ আরো তথ্য প্রযুক্তি রাজশাহী সারাদেশ
শেয়ার করুন...

মিন্টু ইসলাম শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি:
২ অক্টোবর ইতিহাসের কালো অধ্যায় এই দিনেই জনপ্রিয় ও গণমানুষের সৎ নির্ভীক প্রবীণ সিনিয়র সাংবাদিক দিপংকর চক্রবর্তীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ২০০৪ সালের এদিনেই খুন হন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর সে সময়ের সহ-সভাপতি ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক দীপংকর চক্রবতী।
পেশাগত দায়িত্বপালন শেষে বগুড়ার কর্মস্থল থেকে রাতে বাড়ি ফেরার পথে শেরপুর পৌর শহরের সান্যালপাড়ায় নিজ বাসার সামনে তাকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের সাংবাদিক সমাজ কালোদিন হিসেবে পালন করে আসছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হত্যাকাণ্ডের দেড়যুগ উপলক্ষ্যে রোববার শেরপুর প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের খ্যাতিমান সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন তার বড় ছেলে পার্থ সারথী কারো নাম উল্লেখ না করে শেরপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই তা নিয়ে লুকোচুরি শুরু হয়। থানা থেকে ডিবি, সেখান থেকে সিআইডি হয়ে আবারও মামলার তদন্ত যায় ডিবিতে। এরই মাঝে তিন দফা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
বাদির নারাজির প্রেক্ষিতে মামলা ঘুরে ডিবিতে আসার পর ২০১৭ সালের ৭মার্চ বগুড়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন ডেকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের কথা দাবি করে তিনি বলেন, জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তী। তাদের হাতে গ্রেফতার জঙ্গি রাজীব গান্ধী ৬ মার্চ বগুড়ার বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় ওই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে রাজীব নিজেসহ চার জঙ্গি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কথা জানায়। অপর তিন জঙ্গিরা হলো সারওয়ার জাহান মানিক, সানাউল্লাহ ও নুরুল ইসলাম। পরে তাদের নামে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এই মামলার সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এস আই মোঃ মজিবর রহমান (বিপিএম) এতে উল্লেখ করেন এই মামলার আসামি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী ওরফে সুভাষ ওরফে শান্ত ওরফে টাইগার ওরফে আদিল ওরফে জাহি ওরফে জাকির ওরফে আবু আল বাঙালকে গ্রেফতার করলে সে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আহসান হাবীবের নিকট হত্যকান্ডের ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করে জানায় যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে আজিজুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, শায়খ আঃ আউয়াল ও ফজলে রাব্বি ওরফে মাজেদুর ওরফে ছানাউল্লাহগণের নির্দেশে পত্রিকায় জেএমবি সম্পর্কে লেখার করণে শেরপুর সান্যালপাড়ায় বাড়ির অদূরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তীকে হত্যা করে।
এই মামলার নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে কথিত বাংলা ভাই ও শায়খ আঃ আউয়ালের ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এবং ফজলে রাব্বি ওরফে ছানাউল্লাহ খুন হওয়ায় তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে ঢাকার গুলশানে হলিাটিজমের হামলা ও হত্যাকান্ডের মামলায় মৃত্যদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধীকে অভিযুক্ত করে গত ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এই মামলায় মোট ৩১ জনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে দায়রা মামলা হিসেবে বগুড়ার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২১ নভেম্বর এই মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য্য আছে এবং আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধীকে হজির করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেয়া আছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছরেও বিচার হয়নি সাংবাদিক দিপংকর চক্রবর্তীর।

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.