মিন্টু ইসলাম বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়ায় কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা ছুঁয়েছে। রবিবার (২ জুলাই) সকালে সরেজমিনে শহরের রাজাবাজারে গিয়ে কাঁচা মরিচের এ দাম দেখা গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা কাঁচা মরিচের এ আকাশছোঁয়া দামকে স্মরণকালের রেকর্ড দাম বলে জানিয়েছেন। তারা জানান পাইকারি আড়তে কাঁচা মরিচ ৪৫০ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ৫৮০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মরিচের এমন মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ী-ক্রেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, দেশে উৎপাদিত কাঁচা মরিচের সংকট দেখা দেয়ায় এবং ঈদের কারণে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে, আগামী দু-একদিন পর দাম কিছুটা কমে আসবে। পুরোপুরি কমবে আরও ১০/১২ দিন পর।
বগুড়ার রাজাবাজারে মরিচ কিনতে আসা ক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছয়শ টাকা। এটা কেমন কথা! বাধ্য হয়ে শুকনো মরিচ কিনে বাড়ি যাচ্ছি। আরেক ক্রেতা মোমিন মিয়া বলেন, কাঁচা মরিচের এত দাম জীবনে শুনিনি। ছয়শো টাকার এক পয়সা কমেও কাঁচা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি কাঁচা মরিচে এখন এক কেজি মাংস পাওয়া যাচ্ছে।
হারেজ উদ্দিন নামের একজন ক্রেতা জানান, কোরবানির মাংস রান্নায় কাঁচা মরিচ ছাড়া স্বাদ পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে আড়াইশো গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনলাম একশো পঞ্চাশ টাকায়। রফিকুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। লোকসান দিয়ে তো আর বিক্রি করা যায় না। বগুড়া রাজাবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, দেশে উৎপাদিত মরিচ সংকটের কারণে দাম এতটা বেড়েছে। ভারত থেকে আমদানি বন্ধ না থাকলে দাম এতটা বাড়তো না। সোমবার থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কিছুটা কমবে। এছাড়া, বগুড়ার নন্দীগ্রাম এবং সাপাহারের মরিচ আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে জমি থেকে উঠানো হবে। তখন দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) এনামুল হক বলেন, বগুড়ায় দুই সময়ে (রবি মৌসুম এবং খরিদ মৌসুম) মরিচ চাষাবাদ হয়। রবি মৌসুমে মরিচ চাষ হয় ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আর খরিদ মৌসুমে ৬৭৫ হেক্টর জমিতে। বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি মরিচ উৎপাদন হয় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট এবং নন্দীগ্রামে। এছাড়া, সদর, শিবগঞ্জ এবং শাজাহানপুর, শেরপুরেও কিছু পরিমাণে মরিচ উৎপাদিত হয়। খরিদ মৌসুমে চাষ কম হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং গাবতলী বন্যাপ্রবণ এলাকা। এখন তো অধিকাংশ জমি পানির নিচে। যে কারণে এই সময় মরিচ উৎপাদন হয় না।
মরিচের সংকট সম্পর্কে এনামুল হক বলেন, এখন বর্ষাকাল। এই সময়ে সারিয়াকান্দি, সোনাতলার সব মরিচের জমি পানির নিচে। যে কারণে উৎপাদন হচ্ছে না। আবার কিছু দিন আগে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। বাজারে কাঁচা মরিচ কম পাওয়ার এটাও অন্যতম একটি কারণ।