প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে নীলাভূমি সাজেক ভ্যালি :দূর্বারবিডি

ভ্রমন গাইড
শেয়ার করুন...

সাজেক থেকে ফিরে
সেলিম চৌধুরী হীরাঃ প্রাকৃতিক-নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে নীলাভূমি অপরূপ সাজেক ভ্যালি। ১৯৯৯ সালে সাজেক ভ্যালিতে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে সরকার। সেনা সদস্যদের যাতায়াতে বেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পের পরিধি বেড়ে যায়। তারপর থেকে পর্যটক কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। ৩০ এপ্রিল ২০১৪ সালে সরকারী ভাবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সাজেক পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচাইতে জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে সাজেক ভ্যালি। পাশাপাশি এড্যাভেন্সর আটিষ্টদের জন্যও এই স্থান উপযোগী। সাজেক নামক এই স্থান বছর জুড়ে বর্ণীল সাজে সেজে থাকে। যে সাজেকের তুলনা হয় না, সাজেকের সৌন্দর্যের তুলনা একমাত্র সাজেক। তার চারপাশে মেঘ খেলা করে, ভ্রমণকারীরা মেঘ ছুঁয়ে দেখে। তাই অপরূপ সৌন্দর্যের সাজেককে মেঘের রাজ্য বলা হয়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসেবে খ্যাত সাজেকের অবস্থান পার্বত জেলার রাঙামাটি। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার প্রাকৃতিক উঁচু-নিচু পাহাড়ের চূড়া সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০শ ফুট উঁচুতে সাজেক ইউনিয়ন। সাজেক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন নেলসং চাকমা। সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সহজে যাতায়াত করা যায়। তাই ভ্রমণকারীদেরকে খাগড়াছড়ি জেলাকে মূল পয়েন্ট হিসাব করে সাজেক ভ্রমণ করতে হয়। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭১ কিলোমিটার। দীঘিনালা থেকে ৪৪ কিলোমিটার।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে চাইলে ভ্রমণকারীরা যখন তখন যাতায়াত করতে পারবে না। সাজেক ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই স্থানীয় পুলিশ ও সেনা ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট সময় সেনা সদস্যদের নিরাপত্তা পাহারায় দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত করতে হয়। তাই যে কোন সময় সাজেকের দিকে যাত্রা করা যায় না। যাতায়াতের সময় সেনা ক্যাম্পে নিবন্ধন করে নিতে হবে। প্রতিদিন মাত্র দুই বার সকাল ১০টা ও বিকেল ৩টায় সেনা সদস্যরা আপনাকে নিরাপত্তা দিয়ে (আগে-পিছনে সেনা সদস্যদের গাড়ী থাকবে) দীঘিনালা থেকে পৌঁছে দিবে সাজেকে। আবার ফেরার পথে একই সময় (সকাল ১০টা ও বিকেল ৩টায়) সেনা সদস্যদের নিরাপত্তায় ফিরতে হবে। ছুটির দিন হলে প্রায় শ’ খানেক ছোট ছোট জিপ, কার একসঙ্গে বহর তৈরি করে সবাইকে নিয়ে যাবে। আর অন্যান্য দিন প্রায় ৩০/৩৫টি গাড়ী একসঙ্গে বহর তৈরি করে যাত্রা শুরু করবে।
মাথায় রাখবেন সাজেক ভ্রমনে গেলে অবশ্যই সেখানে রাত্রী যাপন করতে হবে। কারণ সকল ১০টায় যাত্রা শুরু করে দুপুর ১টায় পৌঁছবেন। বিকেল ৩টায় আবার ফিরে আসা সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে যেখানেই অবস্থান করেন না কেন সকাল ১০টার আগে দীঘিনালা পৌঁছতে হবে, না হয় আপনাকে দীঘিনালায় বিকাল ৩টা পর্যন্ত (৫ ঘণ্টা) অপেক্ষা করতে হবে। বিকেল ৩টার বহর মিস্ করলে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কিভাবে যাবেনঃ- সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলায় হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ি জেলা হয়ে সাজেক যেতে হবে। তাই আপনি যেখান থেকেই যাত্রা শুরু করেন, প্রথমে খাগড়াছড়ি পৌঁছতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে স্যামলি, এস আলম, ঈগল, সৌদিয়া, শান্তি পরিবহন, ইয়ার-৭১, সেন্টমার্টিন, হানিফ ও বিআরটিসি বাসে যেতে পারেন। ঢাকা কলা বাগান, গাবতলী, মতিঝিল, সায়দাবাদ থেকে বাস পাওয়া যায়। ভ্রমণের জন্য ৮-১২ জনের গ্রæপ হলে মাইক্রো বাস ভাড়া করে অথবা ছোট পরিবার হলে ছোট কার ভাড়া করে যেতে পারেন। যারা সরাসরী দীঘিনালায় যেতে চান তারা শান্তি পরিবহনে যেতে পারেন। শান্তি পরিবহন ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি দীঘিনালায় যায়। পাশাপাশি ইয়ার-৭১সহ আরো কয়েকটি বাস সরাসরি দীঘিনালায় যায়। চট্টগ্রামের কদমতলী, বদ্দারহাটসহ শহরে কয়েকটি স্থান থেকে বাসে খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা যাওয়া যায়। তবে অক্সসিজেন মোড় থেকে প্রতি ঘণ্টায় শান্তি পরিবহন সরাসরী দীঘিনালা যায়। ফেনী-কুমিল্লা থেকে সরাসরী খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালার বাস রয়েছে। ছুটির দিন ভ্রমণ করতে চাইলে আগে থেকে টিকেট বুকিং দিয়ে রাখা ভালো।
খাগড়াছড়ি অথবা দীঘিনালা হয়ে সাজেক যেতে উভয় স্থানে জিপ বা টমটম গাড়ী (স্থানীয় ভাষায় চাঁদের গাড়ী) ভাড়া করা যাবে। দুই দিনের জন্য (রিজার্ভ) খাগড়াছড়ি থেকে ৭৭০০-৮০০০ টাকায় ও দীঘিনালা থেকে ৭০০০-৭৫০০ টাকায় চাঁদের গাড়ী ভাড়া করা যাবে। প্রথম দিন নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দিন ফিরিয়ে আনবে। এছাড়াও খাগড়াছড়ি থেকে মোটরসাইকেলে দীঘিনালা জনপ্রতি ১০০ এবং একজন হলে রির্জাভ ২০০ টাকায় যাওয়া যায়। বাসে যেতে চাইলে ভাড়া ৫০ টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। আবার মোটর সাইকেলে সরাসরি সাজেক ঘুরে আসা যায়, একজন হোক বা দু’জন হোক ভাড়া নিবে ১৮০০-২৫০০ টাকা। পাহাড়ী বড় সিএনজি পাবেন ৩৫০০-৪৫০০ টাকায়। (৩/৪ জনের গ্রæপের জন্য) জিপ (চাঁদের গাড়ী) ড্রাইভার মোবাইলঃ ০১৬৩৪৮৪৭৬৫৬, মোটর সাইকেল মোবাইলঃ ০১৮২৮-৯৪২৬৩৪। এছাড়াও প্রত্যেকটি রির্সোটে রুম ভাড়া করার সময় ওদের মাধ্যমে চাঁদের গাড়ী ঠিক করাই নিরাপদ।
মনে রাখতে হবে, বাহন যাই হোক না কেন সকাল ১০টার আগেই দীঘিনালা পৌঁছতে হবে। দীঘিনালা থেকে সেনা সদস্যরা আপনাকে নিরাপত্তা দিয়ে সাজেক পর্যন্ত নিয়ে যাবে। সকালের গাড়ী বহর মিস্ করলে আপনাকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে (প্রায় ৫ ঘণ্টা)। আবার বিকেলের গাড়ী বহর মিস্ করলে আপনাকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দীঘিনালা পৌঁছে হাতে সময় থাকলে হাজাছড়া ঝর্ণা ঘুরে দেখতে পারেন। যা পাকা সড়ক থেকে পায়ে হেটে এক কিলোমিটার ভিতরে যেতে হয়। তবে সাজেক থেকে ফেরার পথেও দেখতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা। দীঘিনালা থেকে সাজেক যেতে সময় লাগবে ২.৩০ মিনিট আর খাগড়াছড়ি থেকে ৩ ঘণ্টা। এই সময়টুকু নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য ঘেরা আঁকা-বাঁকা, উচুঁ-নিচু পাহাড়ী রাস্তা ধরে চলার সময় আপনার জন্য স্বরণীয় হয়ে থাকবে। চারদিকে ছোট-বড় সারি সারি পাহাড়, গাছ-পালা, জঙ্গল, কাশফুল, সবুজের সমারোহ আপনাকে ভুলিয়ে দিবে সব ক্লান্তি। এনে দিবে আনন্দ আর প্রশান্তি। রাস্তার দু’পাশে দেখতে পাবেন উপজাতিদের মাচাং ঘর-বাড়ি, তাদের জীবন বৈচিত্র। চোখে পড়বে শত শত সহজ-সরল উপজাতি শিশু, যারা হাত নেড়ে নেড়ে আপনাকে স্বাগতম ও বিদায় জানাচ্ছে।
দীঘিনালা থেকে সাজেক যাওয়ার পথে দীঘিনালা বন বিহার, পাহাড়ী কৃষি ইউনিষ্টিটিউট, কম্পানী সদর, বাগাইহাট, মাচালং বাজার, সাজেক থানা, মেকং ইউনিয়ন বাজার, রুইলুস পাড়া অতিক্রম করে যেতে হবে সাজেক।
সাজেকে দেখবেন কিঃ- সাজেকের সর্বউচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। যা সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে কংলাক পাড়া। কংলাক পাড়া থেকে দেখা যায় কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড়। মূল সাজেক বাজার ও সেনা ক্যাম্প থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত কংলাক পাহাড়ের পাদোদেশ থেকে পাহাড়ের গাঁ বেয়ে সরু মেঠো পথে প্রায় ৩০০ মিটার আস্তে আস্তে হাটি হাটি পা পা করে উঁঠতে হয় উপরে। গাঁ শির শির করা ভয়, আনন্দ আর পুলক ছড়িয়ে পড়ে মনে প্রাণে। এ যেন এক নতুন অভিজ্ঞতা, যেন নতুন কিছু জয় করার মত আনন্দ। চূড়ার উপরে প্রথম অংশে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি ত্রিশ পরিবার ও পরের অংশে লুচাই জনগোষ্ঠির পয়তাল্লিশ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের প্রধান হলেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বি চং মিং থাং (৭৭) এই গ্রাম প্রধানকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় হেডম্যান। দেখবেন এক অদ্ভুত জীবন অতিবাহিত করছে সর্বচ্চো চূড়ার বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠি। উপরে উঠলেই তাদের জীবন বৈচিত্র স্বচোখে দেখা যায়। কংলাক পাহাড়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য, পাহাড়ের গায়ে সরু মেঠো পথ মাড়িয়ে ৩০০ মিটার উপরে উঠাও নামার অভিজ্ঞতা। তার চারপাশে অপরূপ সৌন্দর্যের নীলা ভূমি সাজেকের রূপ দেখে মুগ্ধ হওয়া। ওই গ্রামে দেখবেন বেশ কিছু রির্সোট এবং দোকানপাট। চূড়ার উপর রির্সোট গুলো বেশির ভাগই ফ্লোরিং বেডের।
আবার সেনা ক্যাম্পের বাইরে যেদিকে তাকাবেন চারপাশে মনোরম সারি সারি টিলা-পাহাড়, সাদা মেঘের ভ্যালা আপনাকে মুগ্ধ করবে। মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। সাদা মেঘ পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ি দেখে নিমিশেই প্রশান্তি এসে যাবে আপনার মনোপ্রাণ। সেনা ক্যাম্প থেকে একশ মিটার দূরে রয়েছে লূসাই গ্রাম। সেখানে দেখবেন মাচাং ঘর, লূসাইদের পোশাকে আদিবাসিদের, লূসাই জনগোষ্ঠির জীবন বৈচিত্র। সহজ-সরল মানুষ গুলোর সান্নিধ্যে আপনার ভালো লাগবে। পাহাড়ের কোলে কোলে দেখবেন ছোট ছোট মাচাং কুটির।
সাজেক গেলে অবশ্যই সকালের সূর্যোদয় দেখতে ভুল করবেন না। সূর্যোদয়ের সময়টাতে পুরো সাজেকে বসে লাল আভা যুক্ত আলোর মেলা। এই আলোর মেলা দেখতে আপনাকে ভোর বেলায় সেনা ক্যাম্পের সামনে হ্যালিপ্যাডে থাকতে হবে। হ্যালিপ্যাড থেকে দেখা যাবে সবচেয়ে মনোরম সূর্যোদয়। বিকেলে রঙিন রূপে সূর্যাস্ত দেখে আপনি বিমোহিত হবেন। রাতের আকাশে দেখতে পাবেন অসংখ্য তারার মেলা। সাজেকে রাস্তার দু’পাশে দেখবেন কাঠ ও বাঁশের তৈরি বাহারি সব হোটেল, মটেল, রির্সোট এর ছোট ছোট ঘর। যা দেখে মনে হবে পাহাড় আলিঙ্গন করে দাঁড়িয়ে আছে। এক কথায় বলা যায় দিন বা রাত, সাজেক যেন কোন শিল্পীর আঁকা ছবি। সন্ধ্যার পর সেনা ক্যাম্পের সামনে ঘুরে দেখতে পারেন ঝাড়ভোজ পিকনিক স্পট।


সাজেক গেলে থাকবেন কোথায়: সাজেক থাকার জন্য শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, আদিবাসি কটেজ রয়েছে। এক রাতের জন্য একজন হলে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় থাকা যাবে। আবার সঙ্গী বা পরিবার থাকলে ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিবে। এই মূল্য মান ও বাহিরের ভিউ এর উপর নির্ধারিত। রির্সোট থেকে ভালো ভিউ পাওয়া যাবে এমন বির্সোটের ভাড়া তুলনামূলক একটু বেশি নিয়ে থাকে। ভালো ভিউর রির্সোট গুলোতে বসেই আপনি প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। যেখানেই থাকতে চান না কেন যোগাযোগ করে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। অন্যথায় ভালো রুম পাওয়ার সম্ভবনা কম। নি¤েœ কিছু নাম ফোন নাম্বার দেওয়া হলো: তাদের সাথে যোগাযোগ করে বুকিং দেওয়া যাবে। এই রির্সোট গুলো খালি না থাকলে তাদের মাধ্যমে অন্য খালি রির্সোট গুলোতে রুম বুকিং দেওয়া যাবে, এজন্য তারা কিছু কমিশন নিবে।
মেঘ পুঞ্জি রির্সোট: সুন্দর ইকো ডেকোরেশনের বাঁশের তৈরি ড্রাম হাউজ এবং আকর্ষণীয় ল্যান্ডস্কেপিক ভিউসহ তিনটি ছোট ও একটি বড় কটেজ রয়েছে। ২-৪জন থাকা যাবে, প্রতি রাতের ভাড়া নিবে ২৫০০ টাকা। বড় কটেজটি ফ্যামেলি সাইজ ৪-৬জন থাকা যাবে। প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০০ টাকা। ছোট কটেজ গুলো কাপল বা হানিমুনের জুটির জন্য অত্যান্ত সুবিধাজনক। যোগাযোগ: ০১৮১৫-৭৬১০৬৫/ ০১৮১৪-২৭৫৭৫৫।
গীরিছায়া হোটেল: গীরিছায়া কাঠের তৈরি দ্বিতলা কটেজ। ডাবল বেডের প্রতিটি রুমে থাকা যাবে ৪-৬জন। প্রতি রাতের ভাড়া ২০০০-২৫০০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৬৬-০৩৫৮২৫/০১৫৩৩-০৫২৭৭৬। রির্সোট রুংরাং: এই রির্সোটে রয়েছে ৬টি ডাবল ও ৪টি কাপল রুম। ডাবল রুম প্রতি রাতে ভাড়া ২০০০-২৫০০ ও কাপল রুম প্রতি রাতের ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৮৪-৭১০৭২৩/০১৮৬৯-৬৪৯৮১৭।
মেঘ মাচাং: কম খরচে ও সুন্দর ভিউ সমৃদ্ধ কর্টেজ এটি। প্রতি রাতের ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮২২-১৬৮৮৭৭।
লুসাই কর্টেজ: এখানে ডাবল রুম ও কাপল রুমসহ রয়েছে ভালো ভিউ সুবিধা। প্রতি রাতের রুম ভাড়া ২০০০-৩০০০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৮৪-১৯৮০০৫।
নিরিবিলি রির্সোট: আরো কম খরচে থাকতে চাইলে নিরিবিলি রির্সোটে থাকতে পারেন। কাঠের তৈরি দ্বিতলা কটেজ এটি, প্রতি রাতের রুম ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা। যোগাযোগ: ০১৮৬৬-৯৫৭৭২৯।
এছাড়াও রয়েছে অনেক গুলি রির্সোট। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি: সাজেক রির্সোট-০১৮৫৯-০২৫৬৯৪, জুমঘর ইকো রির্সোট-০১৮৮৪-২০৪০৬০, আলো রির্সোট-০১৮৪১-০০০৬৪৫। সবচেয়ে কম খরচে থাকার জন্য আধিবাসী ঘরগুলো বেছে নিতে পারেন (২০০-৫০০) টাকা।


খাবেন কোথায়: সাধারণত সব রির্সোট গুলিতে নিজস্ব খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এরজন্য অবশ্যই চার-পাঁচ ঘণ্টা আগে খাবার মেনুসহ বলে রাখতে হবে। সাধারণ বাঙ্গালী খাবার খেতে চাইলে মান ভেদে জন প্রতি ১০০-২০০ টাকায় খাওয়া যাবে। আর কমন রেস্টুরেন্ট গুলোতেও মান ভেদে ১২০-২৫০ টাকায় খাওয়া যাবে। এর জন্যও আগে থেকে বলে রাখতে হবে কতজন খাওয়া খাবেন।
খাবার ব্যাপারে সবচেয়ে নিরাপদ সেনা ক্যান্টিন। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রীত ক্যান্টিনে খেতে চাইলে লান্সের জন্য সকালেই অর্ডার দিতে হবে। ডিনারের জন্য দুপুরে অথবা সকালে অর্ডার দিতে হবে। সাজেক পৌঁছার আগে লান্সের জন্য দীঘিনালা থাকা অবস্থায় টেলিফোনে অর্ডার করে রাখতে হবে। না হয় ক্যান্টিনে লান্স করা যাবে না। ক্যান্টিনের যোগাযোগের নাম্বার ০১৮৮৪-৭০৮৩৪৪।
সাজে যাবেন পাহাড়ী ঐতিহ্যবাহী বেম্বো টি আর বেম্বো চিকেন (উপজাতীয় ভাষায় চুমুদিয়া পুরুহেরা) স্বাদ গ্রহণ করবে না, তা হতে পারে না। ডিনারের খাবার মেনুতে এক বেলা বেম্বো চিকেন রাখতে পারেন। এই বেম্বো চিকেন পাহাড়ী ঐতিহ্য বলে কথা। একটি বেম্বো চিকেন দাম নিবে ৫০০-৭০০ টাকা, খেতে পারবেন ৪জন। জনপ্রতি পড়বে ১২৫-১৭৫ টাকা। আর একজনের জন্য সিঙ্গেল অর্ডার করলে দিতে হবে ২০০-২৫০ টাকা।
ঘুরা-ঘুরির মাঝে যা খাবেন তাহলো পাহাড়ী ডাব প্রতি পিস্ ৩০-৫০ টাকা। পাহাড়ী কলা প্রতি পিস্ ১-৩ টাকা, পেপে প্রতি পিস্ ২০-৫০ টাকা, পাহাড়ী আনারস প্রতি পিস্ ১৫-৩০ টাকা, চা ১০টাকা, কফি ২০-৩০ টাকা।


অসুবিধা সমূহ: সাজেকে বিদ্যুৎ নেই, সোলার এবং জেনেরেটার ব্যবহারে বিদ্যুৎতের চাহিদা মিটে। সে কারণে সঙ্গে পাওয়ার ব্যান্ড রাখবেন। এতে করে মোবাইল ফোন ব্যবহারে সমস্যা হবে না। ওখানে শুধু মাত্র রবি ও এয়ারটেল ছাড়া অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্ক থাকে না। তাই রবি বা এয়ারটেল সিম সঙ্গে রাখবেন। নিজের প্রয়োজনীয় সবকিছু সঙ্গে রাখার চেষ্টা করবেন। সাজেকে সব পণ্য ৪-৫ ক্ষেত্র বিশেষ ১০ টাকা বেশি বিক্রয় করে, কারণ তাদের ল্যান্ডডিং কোষ্ট বেশি। প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধ সঙ্গে রাখলে ভালো হবে। সেনা ক্যাম্পের ছবি তোলা যাবে না। আধিবাসীদের ছবি তুলতে অনুমতি নিবেন, অনুমতি না পেলে জোর করবেন না। ঘুরাঘুরি সময় পানি সঙ্গে রাখবেন।
মোদ্দা কথাঃ ভ্রমণ যেখান থেকে শুরু করেন সকাল ১০টার আগে দীঘিনালা পৌঁছে যাবেন। সাজেক পৌঁছে বিকেলে কংলাক পাহাড় ঘুরে দেখবেন। সন্ধ্যা হ্যালিপ্যাডে উপস্থিত হয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করবেন। রাতে ঘুরাঘুরি করে রাতের খাবার খেয়ে একবারে রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিবেন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে হ্যালিপ্যাডে গিয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করবেন। সকালের নাস্তা সেরে ৮টার মধ্যে রুমে ডুকবেন। আনুসাঙ্গীক কাজ সেরে ব্যাগেজপত্র নিয়ে ৯টার মধ্যে চাঁদের গাড়ীতে অবস্থান করবেন। সকাল ১০টার বহরে ফিরতে না চাইলে বিকেল ৩টায় ফিরার ব্যাপারে এবং একের অধিক রাত্রি সাজেক থাকতে চাইলে অবশ্যই চাঁদের গাড়ী ভাড়ার করার সময় ভালোভাবে কথা বলে নিবেন। সাজেকের সৌন্দর্য্য রক্ষার স্বার্থে যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।

image_pdfimage_print

শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.