আব্দুল মজিদ মল্লিক, আত্রাই (নওগাঁ) থেকে: প্রযুক্তির ব্যবহার আর উন্নত জীবন-যাপনে কালের বির্বতনে হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে। ক্রমেই বিলীন হয়ে যাওয়া আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় এই নির্দশনটি এক যুগ আগেও রাতের আধারে রাস্তা পারাপার থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে অপরিহার্য্য ছিল। গ্রামে গঞ্জে হারিকেন মেরামত করা মিস্ত্রীদের হাক শোনা যেত। পল্লী বিদ্যুতায়নের যুগে এখন আর এমন দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে। যার দরুণ গ্রাম বাংলার প্রতি গৃহের অতি প্রয়েজনীয় হারিকেন আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
১৯৯০ সালের দিকে গ্রামের প্রতিটি ঘরে এই হারিকেনের দেখা মিললেও এখন তা আর চোখে পড়ে না। ইন্টানেটের এই দুনিয়ার ভিড়ে হারিয়ে গেছে অনেক কিছু। প্রযুক্তির আধুনিকতা আর উন্নত জীবন-যাপনের কারণে দিনদিন মানুষের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় একটি গ্রামীন জনগোষ্ঠীর বসবাস। নব্বই দশকের পর আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে এই উপজেলার গ্রাম গুলোতে। পাঁকা রাস্তা, বিদ্যুৎ আর ইটের তৈরি বাড়ির পাশাপাশি এখন ইন্টারনেটের সুবিধাও পাচ্ছে এই উপজেলার গ্রামের মানুষ।
আত্রাই উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক মো.ফরিদুল আলম পিন্টু একান্তে তিনি বলেন, ৫২ ভাষা আন্দলোন, আর দেশ স্বাধীনের সব কথাই মনে পড়ে। আমাদের সময় কারেন্ট (বিদ্যুৎ) ছিল না, মোবাইল ছিল না, কয়েকটি জেলা মিলে একটি টেলিফোন লাইন ব্যবহার করা হতো। সেটা আবার জমিদারেরা ছাড়া ব্যবহার করতে পারতো না। এখনতো হাতে হাতে মোবাইল। হাতিয়া পাড়া গ্রামের ডা.গিয়াস উদ্দিন বলেন আমি পেশায় ডাক্তার ছিলাম, আমার মনে পড়ে, রোগী দেখার জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামে যেতে হারিকেন হাতে নিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতাম। সেই সময় ব্যাটারী চালিত টর্চ লাইট পাওয়া যেত। বড়লোকেরা ছাড়া এ লাইট ব্যবহার করতো না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সময় কুপি ও হারিকেনগুলো ছিল বাহারি ডিজাইনের। মাটি, লোহা, কাঁচের বোতল আবার পিতলের তৈরি কুপিও ছিল। নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী লোকজন কুপি ও হারিকেন কিনে সেগুলো ব্যবহার করত। গ্রাম বাংলার আপামর লোকের কাছে কুপি ও হারিকেনের কদর হারিয়ে গেলেও এখনও অনেকে আকড়ে ধরে আছেন কুপি ও হারিকেনের স্মৃতি। প্রযুক্তির আধুনিকতা আর উন্নত জীবন-যাপনের কারণে দিনদিন মানুষের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী নিদর্মনটি টিকিয়ে রাখার দাবি জানায়।