প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ‍্যমান কর্মতৎপরতা চাই -জাতীয় প্রেসক্লাবে ব্যারিস্টার নাজির

আইন-অপরাধ আরো ঢাকা পরিবেশ প্রবাস সারাদেশ
শেয়ার করুন...

শ‌হিদুল ইসলাম, প্রতি‌বেদক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতসহ প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের দৃশ‍্যমান কর্মতৎপরতা আমরা দেখতে চাই। সরকারের ১১ মাস পার হতে চলল। নির্বাচনের আর বেশী সময় নেই। এজন‍্য প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের কাজ করতে হবে দ্রুত গতিতে। (৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, ইউকে’র উদ্যোগে “দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষে এই দাবি জানান সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, বৃটেন প্রবাসী বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সদস‍্য ব‍্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ব্যারিস্টার মুজাক্কির হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশ – এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আব্দাল আহমদ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন দিনের পর দিন। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ থেকে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বাংলাদেশি, যারা প্রবাসে থাকেন, তাদের বঞ্চিত করলে বরং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে অতীতের কোনো রাজনৈতিক সরকারই প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে সত‍্যিকার আন্তরিকতা দেখায়নি। বিগত ৫৪ বছর শুধু মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। অথচ এই দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক। তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। পৃথিবীর প্রায় ১২০টি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আছে যাদের একেকটি দেশের মোট জনসংখ্যা দেড় কোটি হবে না। সুতরাং এত বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের অবহেলা করে রাষ্ট্রের টেকসই সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব নয়। দেড় কোটি প্রবাসীদের সন্তুষ্ট করুন ও তাদের ন্যায্য এবং যৌক্তিক দাবী মানুন, তার বিনিময়ে দেখবেন প্রবাসীরা কোটি কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।

তিনি আরও বলেন, পতিত সরকার ও প্রতিবেশী বড় একটি দেশ বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একার পক্ষে এগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের একটি পজিটিভ দিক হচ্ছে তার দেড় কোটি নাগরিক প্রবাসী। তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার দিয়ে সঠিকভাবে যুক্ত করলে তারা বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে একেকজন আনঅফিশিয়াল এম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করতে পারেন।

ভোটাধিকার আন্দোলনের সমসাময়িক পেক্ষাপট বর্ননা করে ব‍্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, গত ডিসেম্বরে প্রবাস থেকে একটি বিশেষজ্ঞদের ডেলিগেশন সাক্ষাৎ করেছিলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুস ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন পূরো নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সাথে। আমিও ছিলাম ঐ ডেলিগেশনের সদস‍্য। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে তাদের সাথে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। গত পরশু প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নাসির উদ্দিন ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়ন সম্পর্কিত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব:) আবুল ফজল মু. সানাউল্লাহর এর সাথে বিস্তারিত আলাপ ও মতবিনিময় হলো। সবাই প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুস একাধিকবার জনসমক্ষে বলেছেন “এটা আমরা করব”। এটাই যদি হয় তাহলে আসন্ন নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অসুবিধা কোথায়? শুধু প্রয়োজন সত‍্যিকারের সদিচ্ছা ও সেই সদিচ্ছা পূরণে যথাযথ কমিটমেন্ট, প্রয়োজনীয় রিসোর্স ও যোগ‍্য লোক। দেশের ভিতর যোগ‍্য, স্মার্ট ও প্রশিক্ষিত লোকবল না থাকলে বা না পেলে বাহিরের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ‍্যে বহু বিশেষজ্ঞ আছেন যারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে পারেন।

প্রবাসীদের পাঁচ দফা দাবি:
১। আগামী সংসদ নির্বাচনে সকল প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ‍্যমান কর্মতৎপরতা আমরা দেখতে চাই।
৩। প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতির কাজ শীঘ্রই শুরু হয়েছে দেখতে চাই। সব প্রবাসীদের এনআইডি কার্ড প্রদানের পর ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে গেলে আশংকা হচ্ছে আগামী নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন না। তাই ভোটার তালিকা প্রস্তুতি সহজতর করা দরকার। বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ফরেন পাসপোর্টে নো ভিসা রিকুয়ার্ড স্ট‍্যাম্প, জন্ম সনদ, এসএসসি সার্টিফিকেটসহ যেকোন পাবলিক ডকুমেন্ট বাংলাদেশী নাগরিকত্ব দেখায় বা প্রমান করে তা দেখিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে।
৪। প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করণে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশীরা হচ্ছেন আসল স্টেকহোল্ডার। তাই তাদের পরামর্শ ও প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের মতামত যথাযথভাবে নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
৫। বৃটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে রিটার্নিং অথবা প্রিজাইডিং অফিসার নিযুক্ত করে প্রয়োজনীয় বুথ সরবরাহ করে ফিজিক্যাল ভোটের ব‍্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যের পর ব্যারিস্টার নাজির আহমদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেন।


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.