পৃথিবীর গভীরতম গর্ত খুঁড়ার রহস্যময় ইতিহাস, ২০ বছরের দুর্বিসহ মিশনের গল্প

আন্তর্জাতিক আরো তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ প্রতিবেদন বিশেষ রচনা বলি সারাদেশ সৌরজগত
শেয়ার করুন...

অনলাইন ডেস্ক: পৃথিবী‌জুড়ে কত শত গর্ত আছে, তা বোধহয় গু‌নেও শেষ করা যা‌বে না। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণের এসব গর্তের গঠন অনেকটা পেয়াজের মতো বিভিন্ন খোলসাকৃতির স্তরে বিন্যস্ত। মানুষ যতটা না আকাশে উঠতে পেরেছে, ভূ-অভ্যন্তরে ততটুকু পর্যন্ত যাওয়া তো দূরের কথা, কোনো গর্তও তৈরি করতে পারেনি। তাই বরাবরের মতো বিষয়টা নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ আকাশচু‌ম্বী।

ভূ-অভ্যন্তরের একেবারে গভীরে যেতে মানুষের প্রচেষ্টা থেমে নেই। নিত্য নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূ-অভ্যন্তরের রহস্য উন্মোচনের প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে। সব‌চে‌য়ে অবাক করা বিষয় হলো, মাটি খুঁড়ে বিজ্ঞানীরা পৌঁছে যেতে চেয়েছিলেন ভূত্বকের নিচে অর্থাৎ ম্যান্টল বা গুরুমণ্ডলে। পৃথিবীর গভীরের রহস্য জানতে ‌বি‌ভিন্ন জায়গায় খাদ করা হ‌য়ে‌ছে। ঠিক যেন জুল ভার্নের সেই কিংবদন্তি কল্পবিজ্ঞান কাহিনি ‘জার্নি টু দ্য সেন্টার অফ আর্থ’। এসব খাদ না করলে মানুষ বিশ্বাসই করতো না যে, ভূত্বকের নিচে আছে অর্ধতরল গুরুমণ্ডল। আর তার উপরে ভূত্বক সর্বত্র সমানভাবে বিন্যস্ত নয়। বরং টুকরো টুকরো অবস্থায় তা ভেসে বেড়ায়।
প্রিন্সটন ইউনভার্সিটির অধ্যাপক হ্যারি হেস মাটি খুঁড়ে গুরুমণ্ডলের অস্তিত্ব খোঁজার শুরুটা ক‌রে‌ছি‌লেন। পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত জায়গা হিসাবে বেছে নেয়া হল মোহরোভিসিক প্রণালী। হেসেলের ধারণা অনুযায়ী সমুদ্রতল থেকে মোটামুটি ৬ কিলোমিটার খনন করলেই পাওয়া যাবে ম্যান্টলের হদিশ। কিন্তু সমুদ্রের বুকে এমন একটা খননকার্য চালানো সহজ কাজ নয়। কাজ করতে হবে জাহাজের উপর থেকে। কিন্তু সেই জাহাজও একেবারে স্থির রাখা সম্ভব নয়।

বিজ্ঞানীরা শেষ পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনীর সাহায্য চাইলেন। দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্যোগে তৈরি হল বিশেষ জাহাজ কিউজ-১, যা নিজের অবস্থান থেকে ৬০০ মিটারের বেশি দূরে যাবে না কখনোই। ১৯৬১ সা‌লের শুরুর দিকে খনন কাজ শুরু হয়। প্র‌জে‌ক্টের নাম দেওয়া হয় মো‌হোল। ত‌বে প্রথম ছয় বছরেও এই প্রজেক্ট খুব বে‌শি সু‌বিধা কর‌তে পারলো না, তাই কাজ বন্ধ করে দেয় মা‌র্কিন সরকার।

তবে প্রোজেক্ট মোহোল বন্ধ হয়ে গেলেও ভূত্বক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ কিন্তু বন্ধ হল না। এবার এগিয়ে এল আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া। ১৯৭০ সালে রাশিয়া-নরওয়ে সীমান্তের কাছে কোলা পেনিনসুলায় গোপনে শুরু হল খননকার্য। পরবর্তী ১৪ বছর এই প্রকল্পের কথা রাশিয়ার বাইরে কেউ জানতেন না। তবে এবারেও ম্যান্টলের সন্ধান পাওয়া গেল না।

১৯৮২-৮৩ সাল নাগাদ যখন বিজ্ঞানীরা ১০ কিলোমিটারের বেশি গভীরতায় পৌঁছে গিয়েছেন, তখনই শুরু হল জটিলতা। মাটির নিচে বারবার আছড়ে পড়ছে সিসমিক তরঙ্গ। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে সবকিছু। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মচারী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। এইসব সমস্যা সামাল দেওয়ার মতো প্রযুক্তি তখন পৃথিবীর কোনো দেশেই ছিল না। তার মধ্যেই ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটল।

১৯৯০ সাল থেকেই বন্ধ হয়ে গেল কোলা সুপারডিপ বোরহোলের কাজ। তবে এর মধ্যেই রেকর্ড তৈরি করে ফেলেছিল রাশিয়া। কোলা অঞ্চলে ১২ কিলোমিটার গভীর গর্ত তৈরি করে ফেলেছিল তারা। এখনও অবধি মানুষের তৈরি সবচেয়ে গভীর গর্ত এইটি!


শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published.